এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘সামা টিভি’ জানিয়েছে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতের কাছে এশিয়া কাপের ট্রফি হস্তান্তর করা হতে পারে। এসিসি এ নিয়ে বিসিসিআইয়ের কাছে সম্ভাব্য একটি তারিখও প্রস্তাব করেছে। সেই দিনটি ১০ নভেম্বর।
সূত্রের বরাত দিয়ে সামা টিভি জানিয়েছে, এশিয়া কাপের ট্রফি হস্তান্তর করতে এর আগে এসিসি সভাপতি মহসিন নাকভির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। এসিসি সেই চিঠির জবাবে বলেছে, ভারতকে তারা কখনো ট্রফি দিতে অস্বীকৃতি জানায়নি। চিঠিতে পূর্বের অবস্থানে অনড় থেকে ভারতের প্রতিনিধিদের এসিসির অফিসে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রফি বুঝে নিতে বলেছে এশিয়ান ক্রিকেটের এই সংস্থা। সামা টিভিকে এ নিয়ে সূত্র বলেছে, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে (ট্রফি) হস্তান্তর করতে ১০ নভেম্বর ভারতীয় বোর্ডকে নিমন্ত্রণ করেছে এসিসি।’
নাকভি শুধু এসিসির সভাপতি নয়, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডেরও (পিসিবি) চেয়ারম্যান। ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ জানিয়েছে, এসিসির সদর দপ্তর দুবাইয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ট্রফি বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব বিসিসিআইকে দিয়েছেন এসিসি ও পিসিবির এই কর্ণধার। টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, করাচিতে সংবাদমাধ্যমকে এ নিয়ে নাকভি বলেছেন, ‘বিসিসিআইয়ের সঙ্গে বেশ কিছু চিঠি আদান–প্রদান হয়েছে এবং এসিসি তাদের জানিয়েছে, দুবাইয়ে ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও খেলোয়াড়েরা এবং বিসিসিআই অফিশিয়াল রাজীব শুক্লাকে ট্রফি দিতে আমরা প্রস্তুত।’

ভারতের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এশিয়া কাপের ট্রফি এখনো বুঝে না পাওয়ার বিষয়টি আগামী আইসিসি ও এসিসির বৈঠকে তুলতে পারে বিসিসিআই। দুবাইয়ে ৪ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত আইসিসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি ও বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, নাকভিকে ই-মেইলে পাঠানো সর্বশেষ চিঠিতে বিসিসিআই লিখেছে, ভারতীয় দলকে ট্রফি না দিলে তাঁকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। এ ব্যাপারে বিসিসিআইয়ের সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া ইন্ডিয়া টুডেকে বলেছেন, ‘বোর্ড ইতিমধ্যেই নাকভিকে ই-মেইল পাঠিয়ে ট্রফি হস্তান্তরের অনুরোধ করেছে। কিন্তু বিষয়টি এখন আনুষ্ঠানিক বিরোধে রূপ নিয়েছে। যদি নাকভি কোনো জবাব না দেন, তাহলে বিষয়টি আইসিসিতে তোলা হবে।’
বিসিসিআইয়ের আইসিসিতে নালিশের হুমকি দেওয়ার পর এসিসির পক্ষ থেকে তাদের একটি চিঠি পাঠান নাকভি। সেই চিঠিতে ভারতকে এশিয়া কাপ জয়ে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক বিষয়ে নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থানও জানিয়েছে এসিসি। চিঠিটির কিছু অংশ প্রকাশ করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে, ‘শুরুতেই আপনাকে এবং ভারতীয় ক্রিকেট দলকে ২০২৫ সালের এশিয়া কাপ জয়ের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই, যেমনটি এসিসি সভাপতি আগেই এজিএমে জানিয়েছেন। এসিসি সভাপতি অত্যন্ত প্রশংসার সঙ্গে লক্ষ করেছেন, চিঠিতে আপনি দীর্ঘদিনের প্রথা, ঐতিহ্য, রীতি, ক্রিকেটীয় শিষ্টাচার এবং খেলাধুলার ন্যায্যতার মৌলিক নীতিগুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি, এসব সুন্দর বক্তব্য শুধু চিঠির শব্দে সীমাবদ্ধ না থেকে মাঠের খেলায়ও একই দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিফলিত হবে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এসিসি সভাপতির দপ্তর কোনোভাবে এমন কোনো তুচ্ছ রাজনীতিতে জড়াবে না, যা শুধু কিছু উগ্র গোষ্ঠীকে তুষ্ট করতে করা হয়। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান নিয়ে বিসিসিআইয়ের অবস্থান বা উদ্বেগ সম্পর্কে এসিসি দপ্তর কিংবা টুর্নামেন্ট পরিচালককে আগে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। শুধু পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে এবং সম্মানিত অতিথিরা যখন মঞ্চে আসন গ্রহণ করেছেন তখনই বিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি জানিয়ে দেন যে ভারতীয় ক্রিকেট দল এশিয়া কাপের ট্রফি ও পুরস্কার গ্রহণ করবে না।
ট্রফি প্রদান নিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘এসিসি সভাপতি সম্মানিত অতিথিদের সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট অপেক্ষা করেছিলেন, যাতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মর্যাদা ও পবিত্রতা অক্ষুণ্ন থাকে এবং রাজনীতির কারণে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এশিয়া কাপের ট্রফিটি নিঃসন্দেহে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাপ্য এবং এটি বর্তমানে সযত্নে সংরক্ষিত আছে—যত দিন না বিসিসিআইয়ের কোনো কর্মকর্তা ও দলের কোনো খেলোয়াড় উপস্থিত থেকে এসিসির সভাপতির কাছ থেকে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন। অবশ্যই, সে সময় পুরো আয়োজন যথাযোগ্য মর্যাদা, উচ্ছ্বাস ও প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হবে, যেন প্রতিষ্ঠিত নিয়মের কোনো ব্যত্যয় না ঘটে এবং আমাদের সবার প্রিয় খেলাটির চেতনা অক্ষুণ্ন থাকে।’

দুবাইয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপ ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, সূর্যকুমার যাদবের দল নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ, নাকভি শুধু এসিসি ও পিসিবির প্রধানই নন, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও।
ভারত মনে করে, এপ্রিলে পেহেলগামে যে হামলাকে কেন্দ্র করে মে মাসে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাত শুরু হয়েছিল, তাতে মদদ ছিল নাকভির। এ কারণে তাঁর কাছ থেকে ট্রফি নেননি সূর্যকুমার-বুমরা-কুলদীপ-অভিষেকরা। কিন্তু নাকভি নাছোড়বান্দা! ভারতীয় দল তাঁর কাছ থেকে এশিয়া কাপ ট্রফি না নেওয়ায় তিনি তা নিয়ে চলে যান এবং সাফ জানিয়ে দেন, ভারতীয় দল বা বিসিসিআইয়ের কোনো প্রতিনিধিকে তাঁর কাছ থেকেই ট্রফি নিতে হবে। ট্রফিটি বর্তমানে দুবাইয়ে এসিসির সদর দপ্তরে রাখা আছে।