শুটিংয়ে কিংবা বাহির; যেখানেই হোক, তাঁকে শুনতে হয় ‘ভাই’ সম্বোধন। একসময় ‘চাচা’ ডাক শুনতেন বটে। তবে এখন ‘ভাই’ শব্দতেই এই অভিনেতা সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আজ তাঁর জন্মদিন। এই অভিনেতার নাম কচি খন্দকার। মঞ্চ থেকে টিভি নাটক পাড়ায়, দীর্ঘজীবনে নানান অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত তেমন অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে এই অভিনেতা বললেন, ‘আমার বন্ধুর ছেলেরাও আমাকে ভাই বলে, এমন বহু ঘটনা ঘটেছে।’
কচি খন্দকার বলেন, ‘একটা সময় কেউ কেউ আমার ক্যারিয়ারে একই চরিত্রে অভিনয় করতে ডাকতেন। এটা আমার জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়েছে। যে স্বপ্নটা ছিল অভিনয় নিয়ে, সেই জায়গায় যেতে পারিনি। সেসব চরিত্রের মধ্যে থাকত আমাকে বয়সে অনেক বড় করে দেখানো হবে, দু–একটি গুরুত্বহীন চরিত্রের জন্য ডাকা। অভিনয়ের জায়গা নেই এমন কাজ করেছি। একবার দর্শক হাসানোর জন্য হাসান মাসুদকে বানানো হলো আমার ছেলে। অথচ তিনি আমার চেয়ে বয়সে বড়। এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। ক্যারিয়ারে সব সময় যে ভালো সময় গেছে, তা নয়। কখনো কখনো টিকে থাকতেই হিমশিম খেয়েছি। সেই জায়গা থেকে এখন অনেক ভালো আছি।’

১৯৬৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এই অভিনেতা। এবার ৬৪ পেরিয়ে গেলেন কচি খন্দকার। হেসে বললেন, ‘বয়স আমার বেশি না। আমি শুধু হাসান মাসুদের এক বছরের জুনিয়রই নই, শহীদুজ্জামান সেলিম, ফারুক আহমেদ, ফজলুর রহমান বাবু, লাভলু ভাইয়েরা আমার সিনিয়র। আসলে বয়স শুধুই একটি সংখ্যা। জীবনে আপনাকে ভালো থাকতে হবে। আমি এত কিছু ভাবি না। ভালো থাকার চেষ্টায় থাকি। সেখানে ভাই বা চাচাতে কি আসে যায়।’
তবে তিনি বুঝতে পারেন এখনো বেশির ভাগ দর্শক বা সহকর্মী তাঁকে ভাই বলেন। এমনকি তাঁর বন্ধুর ছেলেরাও কেউ কেউ নাকি তাকে ভাই ডাকেন। ‘আমার কাছের বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হয়, কথা হয়। তাদের সঙ্গে এক রকম সখ্য। আবার যাঁরা একটু দূরে থাকেন, বা বহুদিন দেখা হয় না, তাঁদের সঙ্গে আরেক রকম। তাঁদের ছেলেমেয়ের কাছে আমি ভাই। দেখা গেল, বন্ধুর ও তাঁর ছেলের সঙ্গে দেখা হলো। বন্ধুটি কিছুটা দূরে গেল। তখন বন্ধুর ছেলে বলছে, “ভাই বসেন।” বন্ধুর ছেলেরা আমাকে ভাই বলে, এমন বহু ঘটনা ঘটেছে। দর্শকেরা একই কথা বলেন। আমি আসলে এখনো দর্শকদের কাছে কচি ভাই।’

জন্মদিনেও শুটিং ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে আর শুটিং করতে হচ্ছে না। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে দিনটি কাটাতে চান এই অভিনেতা। অনেকে তাঁকে ফোনে বা ফেসবুকে বিশেষ দিনের শুভেচ্ছা জানান, এটা তাঁর ভালো অনুভূতির একটি। কচি খন্দকার বলেন, ‘আমার জন্মদিন নিয়ে আলাদা করে কোনো পরিকল্পনা থাকে না। কিছু মানুষ আমাকে ভালোবেসে দিনটি উদ্যাপন করে। এটা বিশেষ পাওয়া। তবে কখনো কখনো শুটিং থাকলেও সবার সঙ্গে ভালো সময় কাটে।’
দীর্ঘ জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি ভালো থাকার চেষ্টা করেন। এ জন্য কাজের মধ্যে থাকতে পছন্দ করেন। বর্তমানে তাঁর নির্মিত ও অভিনীত ‘তেল ছাড়া পরোটা’ ধারাবাহিক প্রচার হচ্ছে। তিনি জানান, দেশের মৌলিক গল্পগুলো তুলে ধরতে চান। এসব তাঁকে মানসিক শান্তি দেয়।

তিনি বলেন, ‘আমি যে কনটেন্ট লিখেছি বা করেছি, সেগুলো একদমই আলাদা। এই গল্পগুলো অন্য কারও সঙ্গে মিলবে না। “কবি”, “ক্যারাম”, “ভূগোল”, “এফডিসি”সহ অনেক কাজ একেবারেই আলাদা করা যায়। এটা নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের চেষ্টা ছিল। সেখানে আমি হয়তো কিছুটা সফল হতে পেরেছি।’
নাটক রচনা, অভিনেতা ও পরিচালক—সব জায়গাতেই তাঁর সফলতার ছাপ আছে। তবে নিজেকে চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা হিসেবেই তিনি পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনায় কম দেখা যায়। চরিত্রের বৈচিত্র্য না থাকার কারণে তিনি অভিনয়ও কমিয়ে দিয়েছেন। চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়েও তাঁর অভিমান আছে।
তাঁর টেলিভিশনে দুই যুগের বেশি সময়ের ক্যারিয়ার। তবে মঞ্চে কাজের অভিজ্ঞতা আরও আগের।
১৯৭৯ সালে তিনি মঞ্চনাটক লেখা ও নির্দেশনা দেওয়া শুরু করেন। তাঁর থিয়েটারের নাম ছিল অনন্যা নাট্যদল। তিনি জানান, নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল চলচ্চিত্র বানানোর। এখন সেদিকেই তিনি হাঁটছেন।