এক যুগ পর চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন, আলোচনায় তিন প্যানেল

prothomalo-bangla_2025-09-22_lxpou4iy_এক-যুগ-পর-ভোট-আলোচনায়-তিন-প্যানেল.avif
আনোয়ার হোসেন

চট্টগ্রাম চেম্বারে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আগ্রহী প্রার্থীরা। এখন চলছে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। আগামী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন বোর্ড। তবে এর মধ্যে ব্যবসায়ী মহলে এই নির্বাচন ও প্রার্থীদের প্যানেল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ২০১৩ সালের পর এবারই সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত হতে যাচ্ছে।

গত রোববার মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ছিল। চেম্বার সূত্রে জানা গেছে, ২৪টি পরিচালক পদের জন্য মোট ৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখন যাচাই-বাছাই বাকি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকার আগে তাই কোনো পক্ষ সরাসরি প্যানেল ঘোষণা দেয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর প্যানেল ঘোষণা করা হবে। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার নির্বাচনে তিনটি প্যানেল হতে পারে। সম্ভাব্য তিন প্যানেলের দলনেতাদের সঙ্গে অন্য সদস্যরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এবারের নির্বাচনে দলনেতা হিসেবে আলোচনায় আছেন চট্টগ্রাম চেম্বার ও দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক, বিজিএমইএ ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি এস এম নুরুল হক এবং বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সভাপতি আমজাদ হোসাইন চৌধুরী। এর মধ্যে আমিরুল হকের প্যানেলে সদস্যসংখ্যা বেশি। এরপর রয়েছে নুরুল হকের প্যানেল।

আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। এ বছর চেম্বারের মোট ভোটার ৬ হাজার ৭৮০। এর মধ্যে সাধারণ সদস্য ৪ হাজার ১ জন, সহযোগী সদস্য ২ হাজার ৭৬৪ জন, ট্রেড গ্রুপ প্রতিনিধি ১০ এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধি ৫ জন। এখন পর্যন্ত ২৪টি পরিচালক পদেই ভোট হবে বলে জানা গেছে। নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মনোয়ারা বেগম।

৩৬ জনের ‘ওয়ান টিম’

এবারের নির্বাচনের জন্য ৩৬ জন ব্যবসায়ী একসঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সিকম গ্রুপ ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হকের নেতৃত্বে এসব ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে একটি প্যানেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের পেট্রো-কেমিক্যাল, শিপিং, রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যবসা রয়েছে আমিরুল হকের।

এই প্যানেলের সম্ভাব্য নাম ‘ওয়ান টিম’। এই প্যানেল থেকে সাধারণ গ্রুপে ২২ জন, সহযোগী গ্রুপে ৮ জন এবং ট্রেড ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে মোট ৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ২৪ পদে নির্বাচন হলেও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার জন্য বাড়তি প্রতিনিধি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সম্ভাব্য এই প্যানেলের আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন মেরিডিয়ান ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম কামাল, আটলান্টিক ট্রেডার্সের কর্ণধার শওকত আলী, ওয়াইএনটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তওসিফ আহমেদ, ইস্টার্ন অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

জানতে চাইলে আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই যাঁরা প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ী, তাঁরা যেন চেম্বারের নেতৃত্বে আসেন। অনেক দিন পর নির্বাচন হচ্ছে, সবার মধ্যে ভোটের আবহ তৈরি হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হোক, ভোটের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক, এটাই কাম্য।’

দুই শ্রেণি ‘এড়িয়ে’ প্রতিবাদ

টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি দুটিকে বাদ রেখে চট্টগ্রামের সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের নামে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে সম্ভাব্য একটি প্যানেল। এই প্যানেলের অধীন ১৮ পদের জন্য ২৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে আছেন শাহ আমানত করপোরেশনের কর্ণধার আহমদুল আলম চৌধুরী, অ্যাকর্ড হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান শাহজাহান মহিউদ্দিন, ডায়মন্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজুল হক, খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহমদ রশিদ আমু প্রমুখ। এ প্যানেলের দলনেতা হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি এস এম নুরুল হক। তিনি মোসমার্ক গ্রুপের কর্ণধার। একসময় তিনি অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালকও ছিলেন।

এস এম নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিক ভোটার তালিকা থেকে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ সদস্যদের বাদ পড়ার পরও বানোয়াট কাগজপত্র দিয়ে তাদের ভোটার করা হয়েছে। আমরা চেম্বারে স্বচ্ছ নেতৃত্ব চাই, তাই দুটি শ্রেণি বাদ রেখে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। পূর্ণাঙ্গ প্যানেলের কথা এখনই বলা যাচ্ছে না।’

আরেকটি প্যানেলের সম্ভাবনা

সম্ভাব্য এ দুই প্যানেলের বাইরে আলোচনায় আছে আরেকটি প্যানেল। তবে এই প্যানেল থেকে কারা নির্বাচন করছেন, সেটি এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত প্যানেলটি হলে সেটি হবে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সভাপতি মো. আমজাদ হোসাইন চৌধুরীর নেতৃত্বে। তবে তিনি প্যানেলের বিষয়ে কিছু প্রকাশ করতে চাননি।

আমজাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে শিপিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই গ্রুপের অধীন জাহাজভাঙা শিল্প, সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও রপ্তানি খাতের ব্যবসা রয়েছে। গ্রুপটির চেয়ারম্যান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আসলাম চৌধুরী। আমজাদ হোসেন তাঁর ছোট ভাই।

আমজাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এখনো যাচাই-বাছাই বাকি। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। কতজন দিয়েছে, কারা দিয়েছে, সেটি এখনই বলতে চাইছি না। তবে এ বছর নির্বাচনে নানা ধরনের নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। এগুলো ব্যবসায়ীদের পক্ষে পাওয়া কঠিন।’

নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণ প্রমাণ করে চেম্বারে ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরেছে। আশা করছি, সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন হবে।’

বাদ যাবেন ঋণখেলাপিরা

নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। তা ছাড়া নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সত্যায়িত কর, ভ্যাট, শুল্ক পরিশোধের সনদপত্র; পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ এবং চেম্বার মেম্বারশিপ সার্টিফিকেটের ফটোকপি জমা দিতে হয়েছে। এসব নথিপত্র যথাযথ না হলে বাদ যাবে মনোনয়ন। কেউ ঋণখেলাপি হলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এ ছাড়া ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা ভোগের পাঁচ বছর পার না হলেও প্রার্থী হওয়া যাবে না।

নির্বাচন বোর্ডের সদস্য ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আহমেদ হাছান বলেন, খেলাপির তথ্য যাচাইয়ে নির্বাচনী বোর্ডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কেউ খেলাপি হলে বাদ যাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top