এখানে বিনা পয়সায় কিছু পাওয়া যায় না

prothomalo-bangla_2025-08-23_bnlfmj1k_kritisanon17323637713507644000796631475448810631-1.avif
আনোয়ার হোসেন

বলিউডের ঝলমলে দুনিয়ায় নিজের আলাদা অবস্থান গড়ে তুলেছেন কৃতি শ্যানন। আজ তিনি প্রথম সারির অভিনেত্রীদের একজন। অথচ ছোটবেলায় তাঁর মনে অভিনয়জগতের কোনো স্বপ্নই ছিল না। পড়াশোনাতেই ছিল ঝোঁক। প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে যখন মডেলিংয়ে পা রাখলেন, তখন খুলে গেল বলিউডের দরজা। ধীরে ধীরে বিজ্ঞাপনের পর্দা থেকে বড় পর্দায় উঠে আসেন কৃতি। আর সেখান থেকেই শুরু হয় এক দীর্ঘ ও কঠিন পথচলা।

২০১৪ সালে ‘হিরোপন্তি’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক। টাইগার শ্রফের সঙ্গে জুটি বেঁধে দর্শকের মন জয় করে নেন  কৃতি শ্যানন। ছবিটি বক্স অফিসে সফল হয়েছিল। প্রথম ছবিতে পরিচিতি পেলেও সহজ ছিল না পরের পথচলা। একদিকে প্রবল প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে ফিল্মি পরিবারের বাইরে থেকে আসার কারণে সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছিল। তবু ধৈর্য, অধ্যবসায় আর আত্মবিশ্বাসের জোরে এগিয়ে যান কৃতি।

এরপর একে একে ‘দিলওয়ালে’, ‘বরেলি কি বরফি’, ‘লুকা ছুপি’, ‘হাউসফুল ৪’, ‘বচ্চন পান্ডে’, ‘ভেড়িয়া’, ‘আদিপুরুষ’সহ বিভিন্ন ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। প্রতিটি ছবিতেই তাঁর অভিনয় আরও পরিণত হয়েছে। তবে ‘মিমি’ দিয়ে আসে সবচেয়ে বড় সাফল্য। এই ছবিতে মাতৃত্বের জটিলতা আর মানসিক টানাপোড়েনকে অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন কৃতি। ছবিটি তাঁকে এনে দেয় সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

সম্প্রতি সিএনএন-নিউজ ১৮ আয়োজিত ‘সি-শক্তি ২০২৫’ অনুষ্ঠানে নিজের অভিজ্ঞতা খোলামেলাভাবে ভাগ করে নেন কৃতি শ্যানন। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রজগতে টিকে থাকতে হলে আপনাকে জেদি হতে হবে, আবেগ থাকতে হবে। শর্টকাট বলে কিছু নেই। কেউ এসে আপনাকে সুযোগ দিয়ে যাবে না। আউটসাইডার হলে লড়াইটা আরও কঠিন হয়। আর এখানে বিনা পয়সায় কিছুই পাওয়া যায় না—না খাবার, না কাজ।’

অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘এই যাত্রায় মানুষ আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করবে। কেউ বলবে আপনি খাটো, কেউ বলবে লম্বা, কেউ বলবে পাতলা। শরীরের আকার নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ চলতেই থাকবে। কিন্তু কেউ বলবে না—তুমি পারবে। তাই নিজের প্রতি আস্থা রাখাই সবচেয়ে জরুরি।’ কৃতির কথায়, কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্যই তাঁকে এই জায়গায় এনেছে। নবীনদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, ‘চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার বানাতে চাইলে ধৈর্য ধরতে হবে। সুযোগ পেতে যদি সময় লাগে, সেটাকে ব্যর্থতা ভাববেন না। বরং ভাববেন, এই সময়টা নিজেকে আরও উন্নত করার সুযোগ। সঠিক সময়ে সবকিছু আপনা থেকেই ঘটতে শুরু করবে।’

সর্বশেষ বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে তাঁর ‘ক্রু’, যেখানে তাঁর সঙ্গে আছেন কারিনা কাপুর, টাবু। এই দুই প্রভাবশালী অভিনেত্রীর মাঝেও সাবলীল অভিনয় করে সবার মন জয় করেছিলেন কৃতি। এ ছাড়া নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছিল ‘দো পাত্তি’। থ্রিলার ছবিটির মাধ্যমে কৃতি তাঁর প্রযোজনা সংস্থা ‘ব্লু বাটারফ্লাই ফিল্মস’ ব্যানারের তলায় প্রযোজক হিসেবে এক নতুন অধ্যায় শুরু করেন। ‘দো পাত্তি’ ছবিতে যমজ বোনের চরিত্রে অভিনয় করে প্রমাণ করেন অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর বহুমুখিনতা।

এ ছাড়া কৃতির হাতে এখনো কয়েকটি বড় প্রযোজকের সিনেমা আছে; ‘তেরে ইশক মে’, ‘ককটেল ২’–এর মতো বড় বাজেটের ছবিতে অভিনয় করতে চলেছেন তিনি। আনন্দ এল রাইয়ের ‘তেরে ইশক মে’ ছবিতে দক্ষিণি তারকা ধানুশের সঙ্গে তাঁকে দেখা যাবে। ছবির শুটিং শেষ। ছবিটি চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর মুক্তি পাবে।

ব্যক্তিজীবনেও কৃতি সমান আলোচনায় থাকেন। প্রেম, বন্ধুত্ব কিংবা পারিবারিক সম্পর্ক—সব ক্ষেত্রেই তিনি খোলামেলা ও আত্মবিশ্বাসী। অভিনয়জগতে স্থায়ী হওয়ার পাশাপাশি একজন সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করার চেষ্টা করেন। সব মিলে সমালোচকদের মতে, বলিউডে যাঁরা বাইরের মানুষ হিসেবে প্রবেশ করতে চান, তাঁদের জন্য কৃতির পথচলা এক বড় অনুপ্রেরণা। তিনি মনে করিয়ে দেন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। ধৈর্য ধরতে হবে। একদিন সাফল্য এসে ধরা দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top