খালি নাম কইবা, সাঈদীকে ফাঁসির দায়িত্ব আমার

Allama-Delawar-Hossain-Sayd-1.jpg
আনোয়ার হোসেন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিচার : মানবতাবিরোধী অপরাধ :: সাবেক বিচারপতির হুমকি ও জোরপূর্বক মিথ্যা সাক্ষ্য গ্রহণ

মধুসুদন সেইফ হাউজে থেকে পালিয়ে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করলে তাকে ফেরৎ নিয়ে এসে রাতভর নির্মম নির্যাতন করা হয়। এরপরও তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তার নাতি সুমনকে অপহরণ করে, তাকে সামনে রেখে বন্দুক ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সাক্ষী দেয়ার জন্য সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত মধুসুদন ঘরামীকে ১৯৭১ সালের ঘটনার সাথে তার স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ধর্ষণ করেছে মর্মে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলা হয়। কিন্তু মধুসুদন সেইফ হাউজে থেকে পালিয়ে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করলে তাকে ফেরৎ নিয়ে এসে রাতভর নির্মম নির্যাতন করা হয়। এরপরও তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তার নাতি সুমনকে অপহরণ করে, তাকে সামনে রেখে বন্দুক ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। অবশেষে তার নাতির জীবন বাঁচাতে মধুসুদন বাধ্য হয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে সম্মত হন এবং সেইফ হাউজে আটক থাকতে বাধ্য হন। একই সাথে সাক্ষীরা দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকার গোলাপবাগে অবস্থিত সেইফ হাউজে জোরপূর্বক আটক থাকার ঘটনা জানিয়েছেন।

গতকাল বুধবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ অভিযোগ করেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া তিন ব্যক্তি। তারা হলেন মাহবুবুল আলম হাওলাদার, মাহতাব উদ্দিন ও আলতাফ হাওলাদার। তাদের পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হোসেন। মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন তিন সাক্ষী।

শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির, পিরোজপুর-১ আসনের এমপি এ কে এম আউয়াল ওরফে সাইদুর রহমানসহ ৪০ জন।

সেইফ হাউজে আটক থাকার ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে সাক্ষীরা জানিয়েছেন, মিথ্যা ও শেখানো সাক্ষ্য ঠিক মতো দিতে না পারলে পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত। পিরোজপুর থেকে আনা প্রত্যেক সাক্ষীর থাকার খাওয়া-দাওয়ার, আদালতে যাওয়ার যাবতীয় তথ্য একটি রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করা হতো এবং পুলিশ তা নিয়মিত তদারকি করত। একদিন সকালে মধুসুদনসহ পাঁচ-ছয়জন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আসামি হেলাল উদ্দিন, রানা দাস গুপ্ত, সানাউল হক, মোখলেছুর রহমানসহ অন্যরা। পরে ট্রাইব্যুনালের রুমে সাবেক চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিম ও অন্য বিচারপতিরা এসে সাক্ষীদের জোরপূর্বক নির্দেশ দেন।

নিজামুল হক নাসিম সাক্ষীদের বলেন, ‘তোমরা খালি নাম কইবা, সাঈদীকে ফাঁসি দেয়ার দায়িত্ব আমার। তোমাদের কোনো ভয় নাই। যেভাবে শেখায়া দিয়েছে সেভাবে সাক্ষ্য দেবে, তাহলেই পুরস্কার পাবে। ভুল সাক্ষ্য দিলেও আমি ঠিক করে নিব। কিন্তু সাঈদীর নাম না কইলে তোমাদের রক্ষা নাই।’ আসামি বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবিরও একইভাবে সাক্ষীদের হুমকি দেন যে, শেখানো সাক্ষ্য না দিলে তাদের হত্যা করা হবে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের আইনজীবী পারভেজ বলেন, ২০০৯ সালে মাহবুবুলকে ডেকে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেন এমপি আউয়াল। তবে রাজি না হওয়ায় তাকে তৎকালীন পিপি কার্যালয়ে তুলে নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এরপর দীর্ঘ নির্যাতনের একপর্যায়ে তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে সাঈদীর নামে মিথ্যা মামলা দিতে বাধ্য করেন। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও এ মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেন। তখনো তাকে যাত্রাবাড়ী থানার অধীনে কথিত সেইফ হোমে এনে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। অভিযোগকারী বাকি দুই সাক্ষীরও একইভাবে জবানবন্দী নেন তৎকালীন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম।

ট্রাইব্যুনালে দেয়া অভিযোগে মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, আমি একজন গর্বিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ইন্দুরকানী (পূর্বের জিয়ানগর), পিরোজপুর। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম আব্দুল আউয়াল ওরফে সাইদুর রহমানের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় গড়ে ওঠে।

এই সূত্র ধরেই তিনি গত ৩০ আগস্ট ২০০৯ তারিখে বিকেলে আমাকে ফোন করে জানান, পরদিন সকাল ৮টার দিকে তার বাসায় যেতে হবে। তার কথামতো আমি ৩১ আগস্ট ২০০৯ তারিখে সকাল ৮টার সময় পিরোজপুর শহরের পাড়েরহাট সড়কে অবস্থিত তার বাসভবনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, উপস্থিত আছেন মামলার অন্যান্য আসামি- আক্তারুজ্জামান ফুলু (পিতা: মৃত শামসুল হক), সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, পিরোজপুর জেলা; জিয়াউল আহসান গাজী (পিতা: মৃত রুস্তম আলি গাজী), সেক্রেটারি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, পিরোজপুর জেলা; সাইদুল্লাহ লিটন (পিতা: মৃত মো: শহিদুল্লাহ), সাবেক পৌর সভাপতি; আবু সাঈদ (পিতা : অজ্ঞাত), সাবেক পৌর সেক্রেটারি; অ্যাডভোকেট কানাই লাল বিশ্বাস; অ্যাডভোকেট মো: মাহবুবুল আলম দেলোয়ার হোসেন; অ্যাডভোকেট দিলিপ কুমার মাঝি; অ্যাডভোকেট শহিদুল হক পান্না এবং অ্যাডভোকেট তরুণ ভট্টাচার্য সবাই পিরোজপুর জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী।

আমাকে দেখেই এ কে এম আউয়াল সাহেব বলেন, “তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে উকিলের চেম্বারে।” আমি কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সাঈদীর বিরুদ্ধে তোমাকে একটি মামলা করতে হবে।” আমি জিজ্ঞেস করি, “আমি কেন তার বিরুদ্ধে মামলা করব? আমি তো তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে পারি না।” তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, “এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ।” তবুও আমি জানাই, “আমি মিথ্যা মামলা করতে পারব না।”

আমার এই কথার পরপরই তিনি চেয়ার থেকে উঠে এসে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি আরো উত্তেজিত হয়ে গালাগাল ও মারধর চালিয়ে যান। ব্যথায় আমি চিৎকার করে উঠলে হঠাৎ রুমে ঢুকে পড়ে মামলার অন্য আসামিরা তানভীর মুজিব অভি (পিতা: মো: মজিবুর রহমান খালেক), হাসান আম্মান লিটন (পিতা : আব্দুল হক ওরফে হক ড্রাইভার), খামরুল ইসলাম মিঠু (পিতা : মো: নাছির খান), অনিরুজ্জামান অনিক (পিতা : আক্তারুজ্জামান ফুলু), মিজানুর রহমান তালুকদার (পিতা : মৃত আব্দুল মজিদ তালুকদার) এবং খসরু খলিফা (পিতা : মৃত চুন্নু খলিফা)। তারা রুমে ঢুকে দল বেঁধে আমাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে শারীরিকভাবে চরম নির্যাতন করতে থাকে এবং বলতে থাকে, “তোকে মামলা করতেই হবে না হলে তোকে আজ মেরেই ফেলব।

‘উপরে উক্ত আসামিদের অত্যাচারের একপর্যায়ে আমি কিছু সময়ের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। কিছুটা জ্ঞান ফিরে এলে আসামি আউয়াল সাহেব আমাকে টেনেহিঁচড়ে তার গাড়িতে তুলে নিয়ে যান এবং পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন পিপি অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিনের শহরের সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজসংলগ্ন চেম্বারে নিয়ে যান।

উল্লেখ্য, অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন আগে থেকেই একটি মামলার কাগজ প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। তিনি সেই কাগজ আমার সামনে দিয়ে স্বাক্ষর করতে বলেন। আমি স্বাক্ষরের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাঈদীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করতে হবে, এটা সেই মামলার কাগজ। তুমি সই করো, বাকিটা আমি দেখে নেবো।’ আমি স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মামলার কাগজে স্বাক্ষর না করলে হত্যার হুমকি দেন।

অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিনের চেম্বারে তখন উপস্থিত ছিলেন আসামি তানভীর মুজিব অভি; আসামি হাসান আম্মান লিটন; আসামি খায়রুল ইসলাম মিঠু; আসামি অনিরুজ্জামান অনিক; আসামি অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন; আসামি অ্যাডভোকেট দিলীপ কুমার মাঝি; আসামি অ্যাডভোকেট শহিদুল হক পান্না; আসামি অ্যাডভোকেট তরুণ ভট্টাচার্য; আসামি নাসিরউদ্দিন মল্লিক এবং আসামি শেখ মোহাম্মদ আবু জাহিদ।

মাহবুবুল আলম হাওলাদার ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে মিথ্যা সাক্ষ্য না দেয়ার চেষ্টা করেছেন একাধিকবার। এমন দাবি করে তিনি বলেন, আমি তাদের আবারো বলি, কেন আমি একজন মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করব? আমি মামলা করতে পারব না।’ এই কথা শুনেই আসামি খাইরুল ইসলাম মিঠু ও আসামি অনিরুজ্জামান অনিকের নেতৃত্বে অন্যরাও আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাতের কাছে যে যা কিছু পেয়েছে তাই দিয়েই আমাকে মারতে থাকে। একপর্যায়ে আসামি শেখ মোহাম্মদ আবু জাহিদ, পিতা : অজ্ঞাত, তৎকালীন ওসি, পিরোজপুর সদর থানা, তার কাছে থাকা অস্ত্র আসামি তানভীর মুজিব অভি, পিতা : মো: মজিবুর রহমান খালেক, সাবেক সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, পিরোজপুর জেলার হাতে তুলে দেয়। তখন আসামি অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন আমার গলা চেপে ধরে আর আসামি আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকায়। ওই পর্যায়ে আসামি আলাউদ্দিন বলতে থাকে, ‘এখনি মামলার কাগজে স্বাক্ষর কর, নতুবা অনিকরা তোকে গুলি করে হত্যা করবে।’ আমি খুব মৃত্যু ভয় পেয়ে যাই এবং আমি তখন বাধ্য হয়ে মামলার ওই কাগজে স্বাক্ষর করি এবং কোর্টে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আসামি অ্যাডভোকেট আলাউদ্দীন, আসামি অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন, আসামি অ্যাডভোকেট দিলীপ কুমার, আসামি অ্যাডভোকেট শহিদুল হক পান্না, আসামি অ্যাডভোকেট তরুণ ভট্টাচার্যের শোনানো মতে জবানবন্দী দেই এবং মামলা দায়ের শেষে তারাই আমাকে তাদের শেখানো মতে মামলার বিষয়টি নিয়ে মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার দিতে বাধ্য করে।

এর কিছুদিন পর অর্থাৎ ইংরেজি ২১ জুলাই ২০১০ অত্র মামলার আসামি পিরোজপুর সদর থানার তৎকালীন ওসি শেখ মোহাম্মদ আবু জাহিদ ও আসামি ইন্দুরকানী (জিয়ানগর) থানার তৎকালীন ওসি নাসিরউদ্দিন মল্লিক এবং আসামি এসআই মো: আবু জাফর হাওলাদারের সাথে আরো কিছু পুলিশসহ আওয়ামী ও যুবলীগের নেতা আসামি আক্তারুজ্জামান ফুলু, আসামি জিয়াউল আহসান গাজী, আসামি সাইদুল্লাহ লিটন, আসামি আবু সাইদ, কানাই লাল বিশ্বাস, আসামি তানজীর মুজিব অভি, আসামি হাসান আম্মান লিটন, খায়রুল ইসলাম মিঠু, অনিরুজ্জামান অনিক, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট দিলীপ কুমার মাঝি, অ্যাডভোকেট শহিদুল হক পান্না, অ্যাডভোকেট তরুণ ভট্টাচার্যসহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের আরো কিছু লোক আমার বাসায় আসে এবং আমাকে জানায় যে, আসামি এ কে এম আব্দুল আউয়াল ওরফে সাইদুর রহমান এবং তার ভাই আসামি হাবিবুর রহমান মালেকের নির্দেশে আমাকে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আগামীকাল যেতে হবে, যদি না যাই- তাহলে কালকেই তোমার জীবনের শেষ দিন, তোমাকে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, তোমার স্ত্রী-সন্তানদেরও ছাড়া হবে না। তারা আরো বলে, তুমি ভোর সকালে রেডি থাকবে, আমরা এসে নিয়ে যাব। পালানোর চেষ্টা কইরো না, রাতে তোমার বাড়িতে সদর থানার ওসি, ইন্দুরকানী (জিয়ানগর) থানার ওসির নেতৃত্বে পাহারা থাকবে। উল্টাপাল্টা করার চেষ্টা করলেই গুলি খাবা। সারা রাত নির্ঘুম কাটানোর পর পরের দিন অর্থাৎ ২২ জুলাই আমাকে ঢাকায় নেয়ার জন্য দুই মাইক্রোবাস ভর্তি করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগের লোকেরা আসে। তখন আমি তাদের সাথে জানের ভয়ে ঢাকায় আসতে বাধ্য হই। ঢাকায় নিয়ে এসে তারা আমাকে ধানমন্ডির একটি বাসায় নিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। পরে জানতে পেরেছি, ওই বাসাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার অফিস আর ওই কাগজটি সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলার কাগজ।

এরপর একদিন আসামি আক্তারুজ্জামান ফুলু, আসামি জিয়াউল আহসান গাজী আসামি সাইদুল্লাহ লিটনের নেতৃত্বে আসামি তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন পিরোজপুরের ইন্দুরকানী (জিযানগর) থানার পাড়েরহাটের রাজলক্ষ্মী স্কুলের মাঠে আমাকে বাসা থেকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। তাদের সাথে ওই দিন আসামি পিরোজপুর সদর থানার তৎকালীন ওসি ও আসামি ইন্দুরকানী (জিয়ানগর) থানার তৎকালীন ওসি নাসিরউদ্দিন মল্লিক এবং আসামি হাবিবুর রহমান মালেক, আসামি আক্তারুজ্জামান ফুলু, আসামি জিয়াউল আহসান গাজী, আসামি সাইদুল্লাহ লিটন, আসামি তানভীর মুজিব অভি, আসামি খায়রুল ইসলাম মিঠু, আসামি অনিরুজ্জামান অনিক, আসামি অ্যাডভোকেট দেলোযার হোসেন, অ্যাডভোকেট দিলিপ কুমার মাঝিসহ আরো কিছু পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগের লোকজন উপস্থিত ছিল। ওই দিন ঘটনাস্থল রাজলক্ষ্মী স্কুলে মানিক পসারী, সুখরঞ্জন বালি, রুহুল আমিন নবীন, মধুসুদন ঘরামী, সুলতান, মফিজ পসারী, বাবুল পণ্ডিত, জলিল শেখ, গৌরাঙ্গসহ আরো অনেককে আমি দেখতে পাই (এদের সবাইকেই ট্রাইব্যুনালে সরকারের শেখানো সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছিল)।

আসামি হাবিবুর রাহমান মালেক আমাদের বলেন, হেলাল ভাই তোমাদের যা বলতে বলে আর যা করতে বলে তোমাদের সেটাই করতে হবে। এর অন্যথা হলে আমাকে তো তোমরা চেনোই, তোমাদের ঘরের লোকেরা তোমাদের লাশও খুঁজে পাবে না। এরপর আসামি হেলালউদ্দিন আমাদের স্কুলের অন্য একটি রুমে লিখে যায় এবং আমাদের কাছে পিরোজপুর শহর ও ইন্দুরকানী (জিয়ানগর) থানায় ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধচলাকালীন সময়ের সব ঘটনা জানতে চায়। অতঃপর আমরা ওই সময়কার যত সত্য ঘটনা জানি তা খুলে বলি। রাজাকারদের হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ সব অপকর্মের সত্য ঘটনাগুলো সব আমরা তাকে বলি। কিন্তু আমরা সেখানে কেউই সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে কিছুই বলিনি। তাকে আমাদের মধ্যে অনেকেই তখন চিনতাম। তিনি রাজাকার ছিলেন না, আর মহান মুক্তিযুদ্ধের কোনো ঘটনায় আমরা তার নামও বলিনি।

কিন্তু পরে আসামি তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাদের বলে, ‘তোমরা পিরোজপুর শহর ও ইন্দুরকানীর যেসব ঘটনা আমাকে বলেছ সেসব ঘটনায় অন্য সব রাজাকারের নামের সাথে সাঈদীর নামও বলতে হবে। তাহলে তোমাদের আর বেশি শিখানো লাগবে না। ঘটনাতো ঠিকই ঘটছে, খালি ওই ঘটনায় সাঈদীর নামটা ঢোকায় দিবা। আমরা একসাথে সবাই বলে উঠি এটা আমরা পারব না। এই কথা বলতে না বলতেই আমাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। শুরুতেই হেলালউদ্দিন তার হাতে থাকা লাঠি (পুলিশের মোটা লাঠি) দিয়ে আমাদের এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। আমাদের ডাক-চিৎকার শুনে পাশের রুমে থাকা আসামি মিজানুর রহমান তালুকদার, খসরু খলিফা, আব্দুল মালেক হাওলাদার, লিয়াকত শিকদার, এনায়েত শিকদার, হাবিবুর রহমান মালেক, আক্তারুজ্জামান ফুলু, জিয়াউল আহসান গাজী, সাইদুল্লাহ লিটন, তানভীর মুজিব অভি, খামরুল ইসলাম মিন্টু, অনিরুজ্জামান অনিক, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন, দিলিপ কুমার মাঝি দৌড়ে আসে। তারা এসেই কোনো কিছু জানতে না চেয়ে আমাদের লোহার রড, প্লাস্টিক পাইপ দিয়ে মারতে থাকে।

আমাদের আসামি হেলালউদ্দিনও নির্দয়ভাবে হাতে-পায়ে মারতে থাকে। ’৭১ সালে পাকসেনারা সুখরঞ্জন বালির ভাই বিশ্বেশ্বর বালিকে (বিশাবালি) হত্যা করে। আসামি হেলালউদ্দিন সুখরঞ্জন বালিকে তার ভাই বিশাবালি হত্যার জন্য সাঈদী হুজুরকে দায়ী করে জবানবন্দী দিতে বলে। কিন্তু সুখরঞ্জন বালি রাজি না হওয়ায় তাকে হেলালউদ্দিন ও উপস্থিত অন্যরা চরম অত্যাচার শুরু করে। তারপরও সে রাজি না হওয়ায় তাকে পাশের রুমে নিয়ে যায়। আমরা এই রুমে বসে সুখরঞ্জন বালির ডাক-চিৎকার শুনতে পাই। আমাদের ওপর চলতে থাকা নির্যাতনের এক পর্যায়ে পাশে থাকা ইন্দুরকানীর ওসি তার পিস্তল আসামি হেলালউদ্দিনের হাতে দিলে ওই পিস্তল দিয়ে হেলালউদ্দিন আমাকেসহ আলতাফ ও মাহতাবের মাথায় আঘাত করে। এরপর ওই পিস্তল পর্যায়ক্রমে আমাদের মাথায় ঠেকিয়ে আসামি হেলাল বলেন, “আমার শেখানো মতে জবানবন্দী না দিলে তোদের এখনি গুলি করে হত্যা করব।” তাদের করা নির্যাতন আর সইতে না পেরে এবং মেরে ফেলার হুমকিতে ভয় পেয়ে আমরা তাদের শেখানো মতে মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের করা সব অপকর্মের ঘটনায় সাঈদী সাহেবের নাম বলতে রাজি হই। যদিও জানের ভয়ে আমরা আসামি হেলালউদ্দিন যে জবানবন্দী লিখে দেয় তাতে আমরা স্বাক্ষর করি। এরপর হেলালউদ্দিন একইভাবে বিভিন্ন দিন বিভিন্ন জনকে রাজলক্ষ্মী স্কুলে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে এসে আটকে রেখে একইভাবে নির্যাতন করে সাঈদী হুজুরকে জড়িয়ে জোরপূর্বক অসত্য জবানবন্দী বানাতে থাকে।

এরপর ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য নেয়া শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন তারিখে আমাকে, আলতাফ হাওলাদার, মাহতাবউদ্দিন হাওলাদার ও অন্য সাক্ষীদের পিরোজপুর থেকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী উপরি উক্ত আসামিদের দিয়ে ধরে নিয়ে এসে ১২-১৩ দিন যাবৎ জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক ঢাকার গোলাপবাগে অবস্থিত একটি সেইফ হাউজে আটকে রাখা হয়। সেখানে আটকে রেখে হত্যার হুমকি দিয়ে আমাদের সাজানো মিথ্যা জবানবন্দী মুখস্থ করানো হয়। ওই সেফ হাউজে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু (বর্তমানে মৃত), আসামি সৈয়দ হায়দার আলী, আসামি রানা দাসগুপ্ত, জোয়াদ আল মালুম (বর্তমানে মৃত), আসামি ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, আসামি সাইদুর রহমান, তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক, আসামি মোখলেছুর রহমান, আসামি আলতাফ ও তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি হেলাল উদ্দিন গংসহ অজ্ঞাত আরো অনেকে আমাদের জীবননাশের হুমকি দিত, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত এবং বাঁচতে চাইলে তাদের কথা মতো মিথ্যা ও বানোয়াট জবানবন্দী মুখস্থ করতে বলত।

মাঝেমধ্যেই ঢাকার গোলাপবাগে অবস্থিত সেইফ হাউজে আসামি সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আসামি সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম রাতের বেলা আসত। তাদের সাথে অনেক পুলিশ থাকত। তারা সেইফ হাউজে আসামি হায়দার আলী, আসামি রানা দাস গুপ্ত বা আসামি ব্যারিস্টার সুমনদের শেখানো সাক্ষ্য না দিলে আমাদের মেরে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিতো এবং প্রসিকিউটরদের শেখানো মিথ্যা জবানবন্দী ঠিকঠাক মুখস্থ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য জোরপূর্বক জিজ্ঞাসাবাদও করত। কেউ সাক্ষ্য দিতে অনিচ্ছা দেখালে আসামি হেলালউদ্দিন ও আসামি সানাউল হক তাকে গালাগাল করত, লোহার রড দিয়ে মারধর করত, এমনকি হত্যার হুমকিও দিতো।

একজন সরকারি সাক্ষী মধুসুদন ঘরামীকে ’৭১ সালে তার স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে সাঈদী হুজুর ধর্ষণ করেছেন মর্মে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলা হলে সে রাজি হয়নি এবং সে সেইফ হাউজ থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাকে আবার ধরে নিয়ে এসে আসামি হেলাল উদ্দিন, রানা দাস গুপ্ত, সাইদুর রহমান, সানাউল হক, মোখলেছুর রহমান রাতভর অমানবিক নির্যাতন করে। এরপরও সে সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় আসামি তৎকালীন পিরোজপুরের এসপির নেতৃত্বে পুলিশের আরো কিছু লোকজন মধু ঘরামীর নাতি সুমনকে পিরোজপুর থেকে অপহরণ করে নিয়ে আসে। এরপর মধু ঘরামীর সামনে সুমনকে উপস্থিত করে তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অতঃপর মধু ঘরামী তার নাতির জীবন বাঁচাতে উপরি উক্ত আসামিদের শেখানো মতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয় এবং সে সেইফ হাউজে থাকতেও রাজি হয়। তখন আমি, আলতাফ হাওলাদার, মাহতাব উদ্দিন হাওলাদার, রুহুল আমিন নবীন, সেলিম খান, গৌরাঙ্গসহ আরো অনেক সাক্ষী গোলাপবাগে অবস্থিত সেই সেইফ হাউজে জোরপূর্বক অনেক দিন যাবৎ আটক থাকতে বাধ্য হয়েছিলাম।

ওই সেইফ হাউজে বসেই মধুসুদন ঘরামী আমাদের কাছে তাকে এবং তার নাতিকে করা সব নির্যাতনের ঘটনা খুলে বলে। শত নির্যাতনের পরও কেউ বয়সের ভারে অথবা মিথ্যা কথাগুলো ঠিক মতো বলতে না পারলে তাদের নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করত। মিথ্যা ও শেখানো কথাগুলো তাদের শেখানো মতে বলতে না পাড়ায় দুই তিন মাস ওই সেইফ হাউজে আমাকে ও অন্যান্য সাক্ষীকে জোরপূর্বক আটকে রেখে ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল। পিরোজপুর থেকে আনা সাক্ষীদের সেইফ হাউজে রাখা, তাদের থাকা-খাওয়া, কোর্টে আসা-যাওয়া, কখন কোন পুলিশ পাহারায় থাকছে সেই বিষয়গুলো একটি রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ করা হতো। ওই রেজিস্ট্রার খাতায় তথ্য লিপিবদ্ধ করার জন্য একজন পুলিশ পরিদর্শক আমাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতেন।

এরপর আটক থাকা অবস্থায় একদিন আমি, মাহতাব হাওলাদার, আলতাফ হাওলাদারসহ পাঁচ-ছয়জনকে ট্রাইব্যুনালে সকাল ৮টার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে আসামি হেলালউদ্দিন, হায়দার আলী, আসামি রানা দাস গুপ্ত, জোয়াদ আল মালুম (বর্তমানে মৃত), গোলাম আরিফ টিপু (বর্তমানে মৃত), আসামি সানাউল হক, আসামি মোখলেছুর রহমান, আসামি আলতাফ উদ্দিন আমাদের এজলাস ঘুরিয়ে দেখায়। অতঃপর আমাদের ট্রাইব্যুনালের একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান আসামি বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক আসামি বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির ও ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শাহিনুর ইসলাম আসেন। গোলাম আরিফ টিপু (বর্তমানে মৃত) ও আসামি সানাউল হক তখন ওই আসামি নিজামুল হক নাসিমের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলে আসামি সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম আমাদের বলেন যে, “তোমাদের যেভাবে শেখায়ে পড়ায়ে আনছে, সেভাবে সাক্ষ্য দেবা, তাহলে পুরস্কার পাবা। তুমি ভুল সাক্ষ্য দিলেও আমি ঠিক কইরা নেবো। কিন্তু সাঈদীর নাম না কইলে তোমাদের রক্ষা নাই। শেখানো সাক্ষ্য দেবা তাহলে পুরস্কার পাবা। তোমরা খালি নাম কইবা, সাঈদীকে ফাঁসি দেয়ার দায়িত্ব আমার, তোমাদের কোনো ভয় নাই।” আসামি এ টি এম ফজলে কবির আমাদের একইভাবে শেখানো সাক্ষ্য না দিলে হত্যার হুমকি দেন।

আসামি নিজামুল হক নাসিমের ওই কথার সাথে সম্মতি দিয়ে উপস্থিত আসামি ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শাহিনুর ইসলাম আমাদের তাদের কথা মতো সাক্ষ্য না দিলে জীবননাশের হুমকি দেন এবং বিষয়টি মনে থাকে বলে শাসান। বিচারকদের এমন আচরণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও আইনের ঘোরতর লঙ্ঘন, যা ন্যায়বিচারকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে এবং এটি ফ্যাসিবাদী সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। হত্যার হুমকি মাধ্যমে আমাদের দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য আদায় করে আল্লামা দেলাওযার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে করা যুদ্ধাপরাধ/মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি ছিল মূলত সম্পূর্ণ সাজানো, মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমাকেসহ অন্য সাক্ষীদের হত্যার হুমকি দিয়ে, স্ত্রী-সন্তান এমনকি নাতিদের অপহরণ ও হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক আমাদের দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়। এভাবে আমাদের সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করে মিথ্যাবাদী হিসেবে চিত্রিত করে, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে বিষাক্ত করে তোলে, অব্যাহত হয়রানি ও নির্যাতনের মাধ্যমে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ধ্বংস করে দেয়।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি ও জোরপূর্বক মিথ্যা সাক্ষ্য দানের ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের নীতির বিরোধী। সরকারি সাক্ষী ও নির্যাতিতরা আশা করেন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই অভিযোগের বিচার হবে।

এর আগে, ২১ আগস্ট সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গুমসহ নির্যাতনের দায়ে শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি। অভিযোগের পাশাপাশি তিনি শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top