‘জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ক্যাডারদের পদোন্নতি নেই এক যুগেও’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদ পাঠিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ১৪ আগস্ট পাঠানো এ–সংক্রান্ত প্রতিবাদে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে পদোন্নতি–সংক্রান্ত তথ্য আংশিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: প্রতিবেদনে যে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, তা প্রতিবেদকের মনগড়া তথ্য নয়; বরং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিয়োগবিধির তথ্য বিশ্লেষণ, বঞ্চিত–সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তাদের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশে গঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং সরকারি চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতিবাদপত্রে সব ননক্যাডার কর্মকর্তা যথাযথ সরকারি বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন উল্লেখ করা হলেও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১ সংশোধনের সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি শাখার ক্যাডারভুক্তির চেকলিস্ট ‘কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্তির নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করতে হবে’ থাকলেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তা অনুসরণ করেনি। এ বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলোতে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ২১ জুন ২০২২ তারিখে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। উপরন্তু মূল নিয়োগবিধি সংশোধনে ‘ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে’ উল্লেখ থাকলেও স্থানীয় সরকার বিভাগ উল্লেখিত কর্মকর্তাদের বিধি–বহির্ভূতভাবে রাজস্ব খাতে যোগদানের তারিখ (২৬.৬.১৯৮৪ খ্রি. থেকে ৭.৭.২০১৫ খ্রি. পর্যন্ত) হতে তাদের ক্যাডারভুক্তির প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রকৃতপক্ষে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৯০ জন কর্মকর্তাকে বিসিএস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) পদে ক্যাডারভুক্তকরণ–সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩০.৫.২০২২ তারিখে প্রজ্ঞাপন জারি করে; যা ১ জুন ২০২২ খ্রি. তারিখ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। গেজেট প্রকাশের তারিখ থেকেই ক্যাডার পদে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রক্রিয়া কার্যকর হবে। এ–সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র প্রথম আলোর কাছে আছে। এ ছাড়া প্রতিবাদপত্রে ইতিমধ্যে ৬৩ কর্মকর্তাকে নির্বাহী প্রকৌশলী (গ্রেড-৫) পদে পদন্নোতি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদকের বক্তব্য হচ্ছে ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা ক্যাডারভুক্তির মাত্র চার মাসের মাথায় ক্যাডারে চাকরি স্থায়ীকরণ, বনিয়াদি প্রশিক্ষণ, বিভাগীয় পরীক্ষা ও সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাহী প্রকৌশলী (গ্রেড-৫) পদে পদোন্নতি পান।
পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রেডেশন তালিকা ছাড়াই পদোন্নতি প্রদান করা হয় যাতে সরাসরি ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত বিশেষভাবে ৩১ ও ৩২তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, যা সরকারি চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়ার বক্তব্যেই প্রমাণিত। বস্তুত উল্লেখিত কর্মকর্তারা যে ১২ বছরেও কোনো পদোন্নতি পাননি এবং তারা তাদের চাকরিতে প্রবেশের প্রবেশ গ্রেড (নবম গ্রেড) এ অবস্থান করছেন ও বেতন-ভাতাদি আহরণ করছেন, তা সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সরাসরি ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে অসন্তুষ্ট, অনেক চিঠি দিয়েও তার কোনো সুরাহা হয়নি। এ নিয়ে অধিদপ্তর উদাসীন, তা সব চিঠি এবং নথিতেও দেখা গেছে। ননক্যাডার থেকে আসা কর্মকর্তার বিষয়ে অধিদপ্তর আন্তরিক অথচ ক্যাডার কর্মকর্তারা বঞ্চিত সেটিও নথিতে উঠে এসেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতিবাদপত্রে এনক্যাডার কর্মকর্তাদের সিনিয়র স্কেল পরীক্ষার বিষয়ে পিএসসি কর্তৃক পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতির কথা উল্লেখ করলেও পিএসসি কর্তৃক ২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের বিজ্ঞাপনের শর্ত এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৭ অনুযায়ী ১৬ জন এনক্যাডারড প্রার্থীর আগস্ট ২০২৪ সিনিয়র স্কেল পরীক্ষার প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সব ক্যাডার কর্মকর্তারা সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন নবম গ্রেড থেকে সিনিয়র স্কেল অর্থাৎ ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জনের জন্য, সেখানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারে এনক্যাডারড কর্মকর্তারা নির্বাহী প্রকৌশলী (৫ম গ্রেড) পদে পদোন্নতি পাওয়ার পরে সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চান। এখানেও নিয়ম ভঙ্গের কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়।
আরও উল্লেখ্য যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতিবাদপত্রে আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করলেও এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ সরবরাহ করা হয়নি। বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখেই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতা মেনেই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।