জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ২৫টি পদের বিপরীতে ২৭৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অন্যদিকে ২১টি আবাসিক হলে মোট ৩১৫টি পদের বিপরীতে ৪৬৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে ছাত্রীদের ১০টি হলে পদের তুলনায় প্রার্থীর সংখ্যা বেশ কম। এর মধ্যে পাঁচটি হলে নির্ধারিত পদের সমান প্রার্থীও মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ সময় ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা। নির্ধারিত সময় শেষে বিকেলে জাকসুর নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে মনোনয়নপত্র দাখিলের তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে।
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ২৫টি পদে জাকসু নির্বাচন ও ২১টি আবাসিক হলে ১৫টি করে মোট ৩১৫টি পদে হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৯ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
ছাত্রী হলে প্রার্থী কম
প্রার্থী কম থাকায় ছাত্রী হলগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১৫টি পদে নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে ছাত্রীদের অন্তত পাঁচটি হলে ১৫টি পদে প্রার্থী পাওয়া যায়নি। ছাত্রীদের বাকি হলগুলোতেও প্রার্থীর সংখ্যা পদের তুলনায় অনেক কম। একটিতে সমানে সমান। তবে এই প্রার্থীদের মধ্যে একই পদে একাধিক জন আছেন কি না, তা এখনই জানা যাচ্ছে না। অপেক্ষা করতে হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে পাওয়া হলভিত্তিক মনোনয়নপত্র দাখিলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ৬ জন, ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৬ জন, সুফিয়া কামাল হলে ১০ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ১১ জন ও প্রীতিলতা হলে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এ ছাড়া ফজিলাতুন্নেছা হলে ১৫ জন, জাহানারা ইমাম হলে ১৬ জন এবং ১৫ নম্বর ছাত্রী হল, বীর প্রতীক তারামন বিবি হল ও রোকেয়া হলে ১৭ জন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এসব হলের বেশির ভাগ পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ নম্বর ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বহ্নি আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার হলে ১৫টি পদে মাত্র ১৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’
ছাত্রী হলে প্রার্থী কম হওয়ার কারণ
ছাত্রী হলে প্রার্থী কম হওয়ার বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০ ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে অন্তত চারজন প্রার্থী হতে আগ্রহী হলেও পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেননি। এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে যেসব ছাত্রী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই পড়াশোনা শেষ হওয়ার কারণে ভোটার হতে পারেননি। ফলে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হল সংসদ সভা করার ক্ষেত্রে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য থাকতে হয়। সে হিসেবে হল সংসদে ৬ জন সদস্য নির্বাচিত থাকলেই সংসদ চলমান রাখা সম্ভব। তবে জাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা আছে, সংসদের কোনো পদ শূন্য হলে আবার ওই পদে নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু হল সংসদের গঠনতন্ত্রে এ বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই বলে জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাত্রীদের হলে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়াতে তাঁরা এক দিন (রোববার) হল সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র তোলা ও জমাদানের সময় দেওয়ার কথা ভাবছেন।
ছাত্র হলে প্রার্থী বেশি
ছাত্র হলগুলোতে ছাত্রীদের তুলনায় বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে। ওই হলে ১৫টি পদের বিপরীতে ৬০ জন প্রার্থী নির্বাচন করবেন এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৪৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এ ছাড়া আল-বেরুনী হলে ১৮ জন, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ২২ জন, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৩০ জন, শহীদ সালাম-বরকত হলে ২২ জন, মওলানা ভাসানী হলে ২৭ জন, ১০ নম্বর ছাত্র হলে ৩০ জন, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ২১ জন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ২২ জন এবং ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৩৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
ছাত্রশিবিরের প্যানেল ঘোষণা
মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’-এর ব্যানারে প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। গতকাল বিকেলে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সদস্য আরিফুল্লাহ আদিব ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
প্যানেল ঘোষণার পর ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মুহিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা পালন করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন এমন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। প্যানেলে জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এবং ৬ জন নারী শিক্ষার্থী আছেন।’
এদিকে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জানিয়েছে, তাদের প্যানেলের নাম হবে ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’। বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী সংগঠন ও সাংস্কৃতিক জোটের একাধিক প্যানেল হতে পারে। তারাও পরে প্যানেল ঘোষণা করবে।
ছাত্রদলের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি
শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, জাকসু নির্বাচনের জন্য প্রার্থী ঠিক করতে কেন্দ্রীয় দুই নেতাসহ বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকে গতকাল সকাল সাতটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় টানা ১৪ ঘণ্টা বৈঠক করেন তাঁরা। তবে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের দিয়ে তাঁরা বিভিন্ন পদে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। রোববার আমরা প্যানেল ঘোষণা করব। ওই দিনই পদভিত্তিক প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করব।’