ডাকসুতে দুটি হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন দুই ছাত্রী

prothomalo-bangla_2025-08-14_v3t2g2ud_Untitled-5.avif
আনোয়ার হোসেন

প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় হল সংসদের নির্বাচনে দুটি সম্পাদকীয় পদে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন দুই প্রার্থী। তাঁদের একজন রেহেনা আক্তার, অন্যজন লামিয়া আক্তার (লিমা)। তাঁরা দুজনই বহিরঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচন করার জন্য দুটি হল সংসদে প্রার্থী হয়েছেন।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সংসদের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন রেহেনা। অন্যদিকে শামসুন নাহার হল সংসদের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী লামিয়া।

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন ২১ আগস্ট প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায় শামসুন নাহার ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সংসদে বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক পদে একটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রী রেহেনা আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। তিনি এখন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দলের সদস্য। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দলে খেলেছেন।

খেলোয়াড় হিসেবে আমার পরিচিতি থাকায় বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক পদে হলের অন্য কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি।

রেহেনা আক্তার

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়ার বিষয়ে রেহেনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে আমার পরিচিতি থাকায় বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক পদে হলের অন্য কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি।’

রেহেনাকে নিজেদের ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেহেনার সঙ্গে আমাদের প্যানেলের কারও বোঝাপড়া হয়ে থাকতে পারে।’

রেহেনার মতোই শামসুন নাহার হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী লামিয়া আক্তার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়ার বিষয়ে তিনি এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রী রেহেনা আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। তিনি এখন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দলের সদস্য। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দলে খেলেছেন।

তবে এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট পদে আর কোনো প্রার্থী না থাকা কাকতালীয়। তবে আমরা কারও সঙ্গে কোনো সমঝোতা বা বোঝাপড়া করিনি। যেসব ছাত্রসংগঠন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তারা কেন হল সংসদে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করল না, সেটাও অজানা। সব পদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে ভালো হতো।’

ছাত্রীদের জন্য ৫টিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট হল আছে ১৮টি। প্রতিটি হল সংসদে ভিপি (সহসভাপতি) ও জিএসসহ (সাধারণ সম্পাদক) পদ আছে ১৩টি। সে হিসাবে সব হল মিলিয়ে মোট ২৩৪টি পদ আছে। এর বিপরীতে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ১ হাজার ১০৮ জন শিক্ষার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, স্বতন্ত্রসহ ১০টির মতো প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কিন্তু কোনো ছাত্রসংগঠনই সব হল সংসদের নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি। ১৮টি হলের মধ্যে ছাত্রদল সর্বোচ্চ ১৪টিতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পেরেছে। তবে প্যানেল ঘোষণা না করলেও বিভিন্ন হল সংসদে অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে শিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।

ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। ভিপি, জিএস, এজিএসসহ ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে পদ আছে ২৮টি। এসব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ৫০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। যাচাই-বাছাইয়ে ৪৭টি মনোনয়নপত্র প্রাথমিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ বিবেচিত হয়।

একটি নির্দিষ্ট পদে আর কোনো প্রার্থী না থাকা কাকতালীয়। তবে আমরা কারও সঙ্গে কোনো সমঝোতা বা বোঝাপড়া করিনি। যেসব ছাত্রসংগঠন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তারা কেন হল সংসদে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করল না, সেটাও অজানা। সব পদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে ভালো হতো।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন

ডাকসুর ভিপি পদে ৪৮ জন, জিএস পদে ১৯ জন ও এজিএস পদে ২৮ জনের প্রার্থিতা প্রাথমিকভাবে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ১২টি সম্পাদকীয় পদে প্রার্থী হয়েছেন সর্বনিম্ন ৯ থেকে সর্বোচ্চ ১৯ জন। আর ১৩টি সদস্যপদের জন্য ২১৫ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে কেউ চাইলে আগামীকাল সোমবারের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন।

চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর ২৬ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে। অবশ্য ছাত্রদল, শিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের প্রার্থীদের অনেকে গত শুক্রবার থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘কুশল বিনিময়’ করছেন।

আমি লড়াই করেই জিততে চাই। নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করছি। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হলে প্রচারে নামব। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের ভোটের মর্যাদা রক্ষায় আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে।

সানজিদা আহমেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী ’

লড়েই জিততে চান সেই সানজিদা

ডাকসুতে এবারই নতুন করে যুক্ত হয়েছে গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদ। এই পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সানজিদা আহমেদকে (তন্বি) সমর্থন জানিয়ে প্রার্থী দেয়নি ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদসহ অন্তত পাঁচটি প্যানেল। সানজিদা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত হয়েছিলেন। তাঁর আহত হওয়ার ছবিটি গণ–অভ্যুত্থানের অন্যতম সাড়াজাগানো ছবি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

তবে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল’সহ কেউ কেউ এই পদে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও কয়েকজন এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী এই পদে সানজিদাসহ ১১ জন প্রার্থী আছেন।

সানজিদা আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি লড়াই করেই জিততে চাই। নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করছি। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হলে প্রচারে নামব। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের ভোটের মর্যাদা রক্ষায় আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top