দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে শিরায় দেওয়া স্যালাইনের (ফ্লুইড) চাহিদা। এই সুযোগে ‘লাগেজ পার্টি’ সিন্ডিকেট বাজারে সুঁইবিহীন মানহীন স্যালাইন সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কম দামে পাওয়া এসব নিম্নমানের স্যালাইন ব্যবহার করে রোগীরা গুরুতর ঝুঁকিতে পড়ছেন, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাননিয়ন্ত্রণ করা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাজারে মানহীন স্যালাইনের দাপট
রাজধানীর মিটফোর্ড ও শাহবাগ এলাকার ফার্মেসিগুলোতে দেখা গেছে,
-
অপসোনিন, বেক্সিমকো, স্কয়ার, এক্মি, পপুলার, ওরিয়ন, লিব্রা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মানসম্মত স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ৮০–১০০ টাকায়,
-
আর একই ধরনের মানহীন স্যালাইন মাত্র ১৫–২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম কম হওয়ায় অনেক রোগীর স্বজনরা মান যাচাই না করেই এসব স্যালাইন কিনে নিচ্ছেন। অথচ অনুমোদিত স্যালাইন সেটে রোগীর সুরক্ষার জন্য সুঁইসহ স্ট্যান্ডার্ড ফ্লুইড কন্ট্রোল ব্যবস্থা থাকে।
অবৈধ স্যালাইন বাজারে আসছে কীভাবে
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, যেসব মেডিকেল সামগ্রীতে সুঁই থাকে তাদের স্বতন্ত্র অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সুঁইবিহীন স্যালাইন সেট, যা মূলত অনুমোদন প্রক্রিয়া এড়ানোর কৌশল। এইসব পণ্যে দামের বা মানের কোনো নির্ধারিত মানদণ্ড নেই।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আকতার হোসেন বলেন,
“মানহীন স্যালাইন সেটের বিষয়ে আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি। সব মেডিকেল ডিভাইস নিয়মিত নজরদারির আওতায় রয়েছে।”
চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা
চিকিৎসকরা বলছেন, মানহীন স্যালাইন সেটে ফোঁটার গতি ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে না, যা রোগীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক বলেন,
“স্যালাইনের ফোঁটা কম বা বেশি হলে রোগীর অবস্থা ভালো হওয়ার বদলে খারাপ হতে পারে। অতিরিক্ত স্যালাইন দিলে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা হ্রাস পায়, আবার কম স্যালাইনে শরীরের চাহিদা পূরণ হয় না।”
দেশীয় শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত
মাননিয়ন্ত্রণ করে স্যালাইন উৎপাদন করা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, অবৈধ ফ্লুইড ব্যবসায়ীরা বাজার দখল করছে, এতে তাদের ক্ষতি হচ্ছে।
জেএমআই গ্রুপের ফাউন্ডার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুর রাজ্জাক বলেন,
“লাগেজ পার্টির মাধ্যমে বিদেশ থেকে নিম্নমানের ফ্লুইড আসছে। মান নিয়ন্ত্রণে রাখায় আমাদের পণ্যের দাম কিছুটা বেশি হয়, কিন্তু মানুষ কম দামের দিকে ঝোঁকে। রোগীর সুরক্ষা ও মেডিকেল ডিভাইস শিল্প রক্ষায় সরকারের কড়া মনিটরিং জরুরি।”
🩺 সংক্ষেপে:
-
ডেঙ্গু রোগী বাড়ায় স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে
-
বাজারে অনুমোদনবিহীন, সুঁইবিহীন স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে
-
রোগীর ঝুঁকি ও দেশীয় শিল্পের ক্ষতি বাড়ছে
-
চিকিৎসক ও উদ্যোক্তাদের নজরদারি জোরদারের আহ্বান