‘আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওপেন নির্দেশনা দিয়েছি। এখন লিথাল ওয়েপন (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ফোনালাপে এমন কথা বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে তার এই নির্দেশনা ছিল।বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও তাপসের কথোপকথনের সেই অডিও শোনানো হয়। পরে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানানো হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৫৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে আজ জবানবন্দি দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, শেখ হাসিনার ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ড জব্দ করা হয়েছে। আজ ট্রাইব্যুনালে শোনানো শেখ হাসিনা ও তাপসের টেলিফোন আলাপের একটি অংশে শোনা যায়, একপর্যায়ে তাপস বলেন, জ্বি আপনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ইয়ে করেন।
তখন শেখ হাসিনা বলেন, সব জায়গায় আগুন, বিআরটি বিটিআরসি বন্ধ করে দিছে, পোড়াইয়া দিছে, বিটিভি পোড়াইয়া দিছে এখন তো ইন্টারনেট বন্ধ, সব পোড়াইয়া দিছে, এখন চলবে কীভাবে! তাপস বলেন, জ্বি, এটা ভালো হইছে, জ্বি।
শেখ হাসিনা বলেন, না.. পোড়াইয়া দিছে, মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে। আমি বলছি যা যা পোড়াতে… ও আমাদের সেতু ভবন পোড়াইছে। তাপস বলেন, জি, ওরা রাতে মনে হয় আরো ব্যাপক আক্রমন করবে। শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেটা পোড়াইছে।
পরে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এসে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ফোনালাপে শেখ হাসিনা নিজেই আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন- ‘আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, (যা যা পোড়াতে..) ওরা পুড়িয়ে দিলো সেতু ভবন।’
তার মানে আগুন দেওয়ার নির্দেশ উনি দিয়েছেন। কিন্তু উনার কাঙ্ক্ষিত জিনিস না পুড়িয়ে অন্য স্থাপনা পোড়ানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা। এর আগে সকালে রাজসাক্ষী হওয়া আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তার উপস্থিতিতে সাক্ষীরা জবানবন্দি দেন।