দেশে চলমান সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে গণভোট।

amarbholanews-photo-publicvote.jpg
আনোয়ার হোসেন

সংস্কারের উদ্যোগে দেশে আলোচনায় এখন গণভোট। ইংরেজি ‘রেফারেন্ডাম’–এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘গণভোট’। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণ সরাসরি ভোট দেওয়ার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের মতামত দেয়। এটি মূলত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোটকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সংবিধান সংশোধন, আইন তৈরি, রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা, এমনকি শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রেও গণভোটের আয়োজন করা হয়। ব্যালটে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোটের মাধ্যমে গণভোট নেওয়া হয়।

বাংলাদেশে গণভোটের ইতিহাস

১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় গণভোটের সংবাদ প্রকাশিত হয়
১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় গণভোটের সংবাদ প্রকাশিত হয়ছবি: সংবাদের সৌজন্যে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে মোট তিনবার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রশাসনিক গণভোট এবং আরেকটি সাংবিধানিক গণভোট। প্রথম গণভোট হয়েছিল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৭ সালে। দ্বিতীয় গণভোট হয় রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৫ সালে। সবশেষ গণভোট ১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

কী কারণে গণভোট হয়েছিল

প্রথম গণভোট: জিয়াউর রহমানের আমলে দেশে প্রথম গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৭ সালের ৩০ মে। উদ্দেশ্য ছিল সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়া জিয়াউর রহমানের শাসনকাজের বৈধতা দেওয়া। রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং তাঁর নীতি ও কর্মসূচির প্রতি আস্থা আছে কি না, সে বিষয়ে দেশের জনগণের মতামত জানতে ওই গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল।

১৯৭৭ সালের ২২ এপ্রিল মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বেতার ও টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে গণভোটের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

ওই বছরের ৩১ মে দৈনিক ইত্তেফাকের খবরে জানা যায়, সারা দেশে ২১ হাজার ৬৮৫টি কেন্দ্রে ৩০ মে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট নেওয়া হয়। ওই সময় দেশে মোট ভোটার ছিলেন ৩ কোটি ৮৪ লাখ।

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, সেই গণভোটে ৮৮ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছিল ৯৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ‘না’ ভোট পড়েছিল ১ দশমিক ১ শতাংশ।

দ্বিতীয় গণভোট: ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ দেশে দ্বিতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নীতি ও কর্মসূচি এবং স্থগিত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনের ওপর জনগণের আস্থা আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য ওই গণভোটের আয়োজন হয়েছিল। আগের মতোই ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ এই পদ্ধতিতে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জনগণের আস্থা থাকলে জেনারেল এরশাদের ছবিসহ ‘হ্যাঁ’ বাক্সে এবং আস্থা না থাকলে ‘না’ বাক্সে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।

১৯৮৫ সালের ৩০ মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবিসহ গণভোট আয়োজনের সংবাদ প্রকাশিত হয়
১৯৮৫ সালের ৩০ মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবিসহ গণভোট আয়োজনের সংবাদ প্রকাশিত হয়ছবি : ইত্তেফাকের সৌজন্যে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, সেই গণভোটে ভোট পড়েছিল ৭২ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে ‘হ্যাঁ’ ভোট ছিল ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ‘না’ ভোট ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

তৃতীয় গণভোট: গণ আন্দোলনে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ। এর ৩ মাসের মধ্যে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয় বিএনপি। ১৬ বছরের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রীশাসিত সংসদীয় পদ্ধতির (পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি) সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট মধ্যরাতে সর্বসম্মতিক্রমে সংসদে বিল পাস হয়।

ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, এরশাদবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ‘তিন জোটের রূপরেখা’ অনুযায়ী জাতীয় সংসদে গৃহীত সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠার পর সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকা বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ সম্মতি দেবেন কি না, সে প্রশ্নে দেশব্যাপী গণভোট আয়োজনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

দেশের ইতিহাসে অনুষ্ঠিত সেই তৃতীয় গণভোটে ভোট পড়ে ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ। ১ কোটি ৮৩ লাখ ৮ হাজার ৩৭৭ জন ভোটার সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে, অর্থাৎ ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন। এই হার ৮৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ৬২ জন ভোটার ‘না’ ভোট দেন। অর্থাৎ তাঁরা রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। ‘না’ ভোটের হার ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। গণভোটে ৯৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বৈধ ভোটের বিপরীতে বাতিল হয়েছিল শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ ভোটা।

এবার গণভোট কেন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ নিলে সামনে আসে গণভোট। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে জুলাই সনদের ভিত্তিতে সংস্কারের বৈধতা দিতে গণভোট আয়োজনে মতৈক্য হয়েছে। তবে এর সময়কাল নিয়ে বিতর্ক রয়েই গেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজনের দাবি তুলেছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ অন্যান্য দল বলছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজন করতে।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই এবার গণভোটের লক্ষ্য বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তবে গণভোট কি আলাদা হবে, নাকি সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছে ঐকমত্য কমিশন।

বাতিল গণভোট কীভাবে ফিরল

১৯৯১ সালে তৃতীয় গণভোটের আগে গণভোট আইন হয়েছিল। সংসদে পাস হওয়া সেই আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল, ‘যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনার অথবা ৮, ৪৮, ৫৬, ৫৮, ৮০, ৯২ক বা ১৪২ অনুচ্ছেদ সংশোধনের ব্যবস্থা করিয়া কোনো বিল উক্ত সংবিধানের ১৪২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদে গৃহীত হইবার পর উহাতে রাষ্ট্রপতি সম্মতিদান করিবেন কি করিবেন না, এই প্রশ্ন যাচাইয়ের জন্য সংবিধানের ১৪২(১ক) অনুচ্ছেদ মোতাবেক গণভোটের বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; সেহেতু এতদ্‌দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল।’

২০ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের সেই বিধান বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওই সংশোধনী বাতিলের মামলায় হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি গণভোটও পুনর্বহাল করে রায় দেয়। সেই রায় কেউ চ্যালেঞ্জ না করায় গণভোট আয়োজনে এখন কোনো বাধা নেই।

১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ দেশে দ্বিতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই গণভোটের খবর পরদিন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ছবিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে দেখা যাচ্ছে
১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ দেশে দ্বিতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই গণভোটের খবর পরদিন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ছবিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে দেখা যাচ্ছেছবি: ইত্তেফাকের সৌজন্যে।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন

লোকপ্রশাসন–বিশেষজ্ঞ ও সংসদবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণভোট যদি করতেই হয়, তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে কেন?’ তাঁর মতে, এতে খরচ অনেক বাড়বে। গণভোট আয়োজনে সরকারের কয়েক শ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।

অধিকাংশ দেশে পার্লামেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট হয় জানিয়ে ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনের সেই শক্তি ও সামর্থ্য নেই। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যানেজমেন্টের ঘাটতি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। সুতরাং তাদের কাছ থেকে গণভোট আয়োজন আশা করা সম্ভব নয়।

গণভোট যদি করতেই হয়, তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে কেন?’

অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ

গণভোটের আয়োজন করলে সারা দেশে ভোট করতে হবে। ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার থেকে শুরু করে নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী নিযুক্ত করতে হবে। মারামারি, হানাহানি ও রাজনৈতিক সংঘাত রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেশব্যাপী মোতায়েন করতে হবে। সব মিলিয়ে গণভোটের জন্য প্রচুর অর্থ খরচ হবে।

সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব রাজনৈতিক দল গণভোটের দাবি করেছে, তা ‘অযৌক্তিক’ বলে মনে করেন অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দুটি নির্বাচন করার মতো সময় নির্বাচন কমিশনের হাতে এখন নেই। কারণ, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে হাতে সময় মাত্র তিন মাস।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপকের মতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যদি গণভোট করতে সর্বদলীয় সিদ্ধান্ত হয়ও, তাহলে তা আগামী ফেব্রুয়ারির কমপক্ষে দুই মাস আগে করতে হবে।

অনেকে আশঙ্কা করছেন, একসঙ্গে দুটি নির্বাচনের ব্যালট পেপার ভোটকেন্দ্রে দেওয়া হলে ভোটাররা তালগোল পাকিয়ে ফেলতে পারেন। তবে এটি হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন অধ্যাপক নিজাম আহমেদ।

নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনগণ তিনটি ব্যালট পেপারে ভোট দেন। এগুলো হলো চেয়ারম্যান, নারী সদস্য ও সাধারণ সদস্য। সুতরাং গণভোট ও সংসদ নির্বাচন বিষয়ে ভোটারদের দুই ব্যালটে ভোট দিতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

গণভোট প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যের ওপর জোর দিয়ে ড. নিজাম বলেন, ‘যদি একদল অন্য দলের প্রতি এতটুকু বিশ্বাস করতে না পারে, তাহলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।’

গণভোট উপলক্ষ্যে ভোটারদের সচেতন করতে এভাবে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোটের বিধান সম্বলিত ব্যালট বাক্সের ছবি ১৯৭৭ সালের ৭ মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়
গণভোট উপলক্ষ্যে ভোটারদের সচেতন করতে এভাবে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোটের বিধান সম্বলিত ব্যালট বাক্সের ছবি ১৯৭৭ সালের ৭ মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ছবি: ইত্তেফাকের সৌজন্যে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শ ম আলী রেজা প্রথম আলোকে বলেন, আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো বিগত আট মাসে অনেক বিষয়েই মতৈক্যে পৌঁছেছে। তাঁর বিশ্বাস, গণভোট অনুষ্ঠানের দিনক্ষণের বিষয়েও দলগুলো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারবে। এর জন‍্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার আকাঙ্ক্ষা।

শ ম আলী রেজা বলেন, গণভোটে যাওয়ার আগে এ দেশের সাধারণ ভোটারদের গণভোট ও জুলাই সনদ বিষয়ে রাজনৈতিক দীক্ষার প্রয়োজন আছে। আবার ভিন্ন সময়ে গণভোট আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য অংশীজন, বিশেষত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতাও গভীরভাবে বিবেচনায় নিতে হবে।

অধ্যাপক আলী রেজার মতে, রাজনৈতিক দলগুলো একমত ও পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল হলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টি তারা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন‍্য রেখে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে না।

এরশাদকে হটাতে ১৯৯০–এর গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে দেশবাসী এমনটি দেখেছেন বলেও জানান এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক।

২টি গণভোট লাগবে?

সংসদবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের মতে, মতপার্থক্য ভুলে সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে সব মিলিয়ে সামনে দেশে আরও দুটি গণভোটের ব্যবস্থা করতে হবে।

‘একটি জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদ বিষয়ে নেওয়া ঐকমত্য কমিশনের নেওয়া সিদ্ধান্ত যাচাইয়ের জন্য। দ্বিতীয়টি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন একটি দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় সংসদের মাধ্যমে ৭২-এর সংবিধান পরিবর্তন, সংশোধন বা বাতিল করা হলে সেটির বিষয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে গণভোটের আয়োজন করতে হবে,’ বলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top