‘দ্বিতীয় মোস্তাফিজ হতে পারে দ্বীপ’

2c90d571e1c0ce8d4031f86b0b2a18e5-68a44e555e958.webp
আনোয়ার হোসেন

নর্থ বেঙ্গল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর হোসেন দ্বীপ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় বেড়ে ওঠা এই বিস্ময়বালকের ক্রিকেট বলের সঙ্গে সখ্য বেশি দিনের না। এক বছর হলো টেপ টেনিস বলের বাইরে গিয়ে ক্রিকেট বলের সঙ্গে তার পরিচয়। এই এক বছরেই নজর কেড়েছে জাতীয় পর্যায়ে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসের শুরুতে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ক্যাম্পে যোগ দিতে চলেছে দ্বীপ। গেল বছর এই ক্যাম্প হয়েছিল ২৯ ক্রিকেটারকে নিয়ে। এবার দ্বীপসহ সেই সংখ্যা ৩০ জন হওয়ার কথা রয়েছে।

অভাবের সংসারে দ্বীপের ক্রিকেট খেলা অনেকটা বিলাসিতার মতোই। বাবা পেশায় বাসচালক, পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কিন্তু বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে সেই উপার্জন বন্ধ। স্বল্প কিছু জমি-জায়গা রয়েছে, অভাবের তাড়নায় সেখান থেকে কিছু কিছু বিক্রিও করতে হয়। এছাড়া পরিবার চলে না।

বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বাবা-মা ও দ্বীপকে নিয়ে এখন তিন জনের পরিবার। এমন যুদ্ধ যেখানে বর্তমান, সেখানে যেন আলো ফুটিয়েছেন বাঁহাতি পেসার দ্বীপ। জাতীয় দলের তারকা পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের মতো কাটার ও ইনসুইং রয়েছে দ্বীপের বোলিংয়ে। যত্ন নিলে রত্ন হতে পারে এই খুদে ক্রিকেটার, এমনটিই মনে করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় দলের জার্সিতে এখন যারা পেস বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে নাহিদ রানা ও শরীফুল ইসলাম উঠে এসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোচ আলমগীর কবিরের হাত ধরে। গেল বছর সেই কোচের নজরেই আসে দ্বীপ। বিভাগীয় ক্যাম্পে ডাকও পেয়েছিল। সেখানেই থেমে গিয়েছিল তার পথচলা। এবার বিসিবির পাইলট প্রোগ্রামিংয়ের অংশ হিসেবে রাজশাহীতে ইয়ং টাইগার চ্যালেঞ্জ ট্রফিতে মোহাম্মদ রফিক, মেহেরাব হোসেন অপি, জাভেদ ওমর বেলিম, হাসিবুল হোসেন শান্তদের নজর কাড়ে দ্বীপ। এমন একজন বাঁহাতি বোলারই খুঁজছিল বলে জানিয়েছেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। এরপরেই তাকে পরিচর্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জেলা কোচ আলমগীর কবির সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন জাতীয় নারী দলের কোচিং বিভাগে। তবু নিয়মিত খোঁজ রাখেন তানভীর হোসেন দ্বীপদের। এই পেসারকে বিস্ময়কর প্রতিভা বলে উল্লেখ করেছেন আলমগীর। তিনি জানান, ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় মোস্তাফিজ হতে পারে দ্বীপ। তার বলে কাটার আছে, ইনসুইং আছে। কিন্তু সে একবারে র ট্যালেন্ট। তার পুষ্টিকর খাবারের অভাব রয়েছে। নিয়মিত পরিচর্যা করা গেলে ভবিষ্যৎ ভালো।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পাইওনিয়ার্স ক্রিকেট ক্লাবে নিয়মিত অনুশীলন করে দ্বীপ। নিয়মিত অনুশীলনের শর্তে সেখানে তিনি বিনা মূল্যেই অনুশীলন করতে পারে। এছাড়া জেলায় আর কোনো ক্রিকেট ক্লাব নেই। বাড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ার কারণে খালার বাসায় থেকে অনুশীলন করে দ্বীপ। ক্রিকেটে আসাটা তার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু এখন পরিবারও তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে।

দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপকালে এই পেসার বলেছে, ‘আমার এলাকার এক বড় ভাই প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট খেলেন। তার পরামর্শে আমি ক্রিকেট বলে অনুশীলন শুরু করি। এরপরে গত বছর বিভাগীয় ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলাম। সেসময় বাদ পড়েছি। তবু খেলা ও অনুশীলন চালিয়ে গেছি। রাজশাহীতে বেশি বল করতে পারিনি। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৭ ওভার করে ১ উইকেট পেয়েছিলাম। বাকি দুই ম্যাচ বৃষ্টির কারণে হয়নি। নিয়মিত অনুশীলন করার চেষ্টা করছি।’

অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ক্যাম্প নিয়ে বলেন, ‘আমি এখনো কিছু জানি না। রাজশাহী থেকে শান্ত স্যারসহ অনেকে আমাকে সাহস দিয়েছেন। আমি কোথাও সুযোগ পেলে ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top