‘প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার’, রয়টার্সকে বিশ্বাসঘাতক বলে পদত্যাগ সাংবাদিকের

1756265079-fb41ee9c159c90709667687d35d00579.webp
আনোয়ার হোসেন

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে দীর্ঘ আট বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করলেন কানাডীয় ফটোসাংবাদিক ভ্যালারি জিঙ্ক। গাজার সাংবাদিকদের হত্যাকাণ্ডে রয়টার্সের ভূমিকা ও তাদের ভুলভাবে সাজানো খবর প্রচারের মাধ্যমে ইসরায়েলি বর্ণনাকে বৈধতা দেওয়ার অভিযোগে তিনি পদত্যাগ করেছেন। বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

পদত্যাগ ঘোষণার সময় ভ্যালারি তার রয়টার্স প্রেস কার্ড ছিঁড়ে ফেলে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, রয়টার্স আজ একটি সংবাদ সংস্থা নয় বরং প্রোপাগান্ডার কনভেয়ার বেল্টে পরিণত হয়েছে, যা সাংবাদিকদের মৃত্যুর পথ সুগম করছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে ভ্যালারি লিখেছেন- গাজার সাংবাদিকদের পরিকল্পিত হত্যাকে সমর্থন ও বৈধতা দেওয়ায় রয়টার্সের সঙ্গে আর কাজ চালিয়ে যাওয়া আমার কাছে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তিনি আরও জানান, প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধ ঢাকতে কাজ করছে।

ভ্যালারি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন- গাজার নাসের হাসপাতালে তথাকথিত “ডাবল-ট্যাপ” হামলায় অন্তত ছয় সাংবাদিক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়টার্সের নিজস্ব ক্যামেরাম্যান হোসাম আল-মাসরিও ছিলেন। এই ঘটনায় সাংবাদিক সমাজে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়।

ভ্যালারি আরও উল্লেখ করেন যে, রয়টার্সের ইসরায়েলি প্রচারণা চালানোর এই প্রবণতা তাদের নিজেদের সাংবাদিকদেরও ইসরায়েলের গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পারেনি। তিনি গাজার সাংবাদিকদের সাহসিকতার কথা স্মরণ করে বলেন, গাজার সাংবাদিকদের সাহস ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানানোর পথ কী, তা আমি জানি না। তবে ভবিষ্যতে আমি আমার সমস্ত অবদান সেই কথা মাথায় রেখেই উৎসর্গ করব। ফিলিস্তিনে আমার সহকর্মীদের কাছে আমি অন্তত এতটা ঋণী।

ভ্যালারি অভিযোগ করেন, রয়টার্স ও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো ইসরায়েলের সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি যাচাই না করেই প্রচার করেছে। এর ফলে আল-শরিফ নামের এক স্থানীয় সাংবাদিককেও হামাস-সংশ্লিষ্ট বলে উপস্থাপন করা হয়। তার মতে, এটি সাংবাদিক হত্যাকে বৈধতা দেওয়ার এক বিপজ্জনক কৌশল।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় এখন পর্যন্ত ২৪৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। একই সময়ে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬২ হাজার ৭০০ জনে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় ইতিমধ্যেই দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে।

জিঙ্ক মার্কিন সাংবাদিক জেরেমি স্ক্যাহিলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য সরাসরি দায়ী। স্ক্যাহিলের মতে- দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে শুরু করে রয়টার্স পর্যন্ত বড় বড় গণমাধ্যমগুলো ‘ইসরায়েলি প্রচারণার বাহক’ হিসেবে কাজ করেছে। তারা যুদ্ধাপরাধকে স্বাভাবিক দেখানো, ভুক্তভোগীদের অমানবিকীকরণ এবং নিজেদের সহকর্মী ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রতি দায়বদ্ধতা বিসর্জন দিয়েছে।

তথ্য সূত্র – আনাদলু এজেন্সি, মিডল ইস্ট আই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top