বহুদূর যেতে চান আলিফ

prothomalo-bangla_2025-08-21_mf4z43az_IMG3807.avif
আনোয়ার হোসেন

মোফাসসাল আল আলিফ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোন ধরতেই ওপাশে ভেসে এল আবেগে ভরা আলিফের কণ্ঠ। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে যেন কিছুটা থমকে গেলেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে জানালেন, ঐতিহ্যবাহী এ ফেস্টিভ্যালে জীবনের অন্যতম বিশেষ মুহূর্ত কাটালেন। একক পরিবেশনায় লালন শাহর দুটি গানকে কেন্দ্র করে উপস্থাপন করেছেন নৃত্যকলা। ‘ইন সার্চ অব ইউ’ শিরোনামের ওই পরিবেশনার থিম ছিল আত্মার খোঁজ, ভালোবাসা আর আত্ম-অনুসন্ধান। সাত মিনিটের পরিবেশনায় সমসাময়িক নৃত্যধারা আর বাংলার লোকজ ভাবনার এক অনন্য মিশ্রণ ঘটিয়েছেন তিনি। অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে আলিফ জানালেন, ‘এত বড় আর সম্মানজনক আয়োজনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে গর্বিত বোধ করছি। পরিবেশনা শেষে অনেকেই আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, যা সত্যিই দারুণ লেগেছে।’

শুরুর গল্প
গ্রামের থিয়েটার আর যাত্রা দেখে নাচের ভূত মাথায় চেপেছিল ময়মনসিংয়ের ছেলে আলিফের। স্কুল ও কলেজজীবনে নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে স্বপ্নপূরণের দিকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়েছেন আলিফ। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারে যোগ দেওয়ার পর নাচের পথটা সহজ হয়ে যায়। নাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ নেন নন্দনকলা কেন্দ্রের এম আর ওয়াসেকের কাছে। সঙ্গে ইউটিউব দেখে পরিচিত হন নাচের ধরনের সঙ্গে। এর মধ্যেই বৃত্তি পান, তেরেন্স লুইস কনটেম্পোরারি ড্যান্স কোম্পানিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য চলে যান মুম্বাইতে। আলিফ বলেন, ‘এ বৃত্তিটা আমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সব সময় আমি কৃতজ্ঞ লুবনা মরিয়ম ও লিখন রায়ের কাছে।’ আলিফ সেখানে সমসাময়িক, জ্যাজ, ব্যালে, বলিউড হিপহপসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পাশাপাশি ইয়োগার ওপরও নিয়েছেন বিশেষ তালিম।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে
দেশের বাইরে বেশ কিছু আয়োজনে নৃত্য পরিবেশন করেছেন আলিফ। এর মধ্যে ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে ও পরের বছর মিসরে ইন্টারন্যাশনাল ফোকলোর কালচারাল এক্সচেঞ্জ ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন তিনি। ২০১৯ সালে অংশ নেন তামিলনাড়ু সংস্কৃতি উৎসবে। ২০১৯ সালে নিজের প্রযোজনা ‘আই অ্যান্ড মাইসেলফ’ নিয়ে পারফর্ম করেন শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়। গত তিন বছরে দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্সসহ ২০টি দেশের বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নেন আলিফ।

নাচের স্কুল
‘অ্যালিফিয়া ড্যান্স অ্যাটেলিয়ের’ নামে একটি ড্যান্স স্কুল পরিচালনা করেন আলিফ। সেখানে আধুনিক নৃত্য শেখান তিনি। স্কুল নিয়ে আলিফ বলেন, ‘এটা আমার স্বপ্নের স্কুল। এখন পর্যন্ত যা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তার বিনিময় করি এখানে। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তিও দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী বাড়ছে। এটাকে কীভাবে আন্তর্জাতিক মানের করা যায় সেভাবে কাজ করছি।’ এখানে যোগব্যায়াম, জ্যাজ, কনটেম্পোরারি, বলিহপ, হাইহিলস, অ্যারিয়াল ছাড়াও নানা ধরনের নাচের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

আলিফের আছে নাচের প্রফেশনাল দল অ্যালিফিয়া স্কোয়াড। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিয়েই শুরু হয় এর পথচলা। দলটির হয়ে বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নেন আলিফ। বর্তমানে ২৬ জন সদস্য নিয়ে চলছে দলের কার্যক্রম। অ্যালিফিয়া স্কোয়াড নিয়ে বড় স্বপ্ন রয়েছে আলিফের। তরুণদের নিয়ে বহুদূর যেতে চান। এ নৃত্যশিল্পী বলেন, ‘নাচকে যাতে তরুণেরা পেশা হিসেবে নিতে পারেন, এ পরিকল্পনা নিয়েই শুরু করেছিলাম। স্বপ্ন দেখি—এই দল একসময় আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে যাবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে সবার মন জয় করবে।’

যত অর্জন

২০১৮ ও ২০১৯ সালে অন্ধ্র প্রদেশের স্কুল অব থিয়েটার থেকে ‘কালাজেভা’ পুরস্কার পান আলিফ। ২০১৯ সালে তামিলনাড়ু থেকে পান ‘নৃত্যকলা রত্ন’ সম্মান। ২০১৮ সালে মুম্বাই থেকে পান ‘নৃত্য তরঙ্গিনী’ পুরস্কার। এ ছাড়া ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ সালে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক নৃত্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top