বিদেশি পর্যটক থেকে আয় এক বছরে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার কমে গেছে

prothomalo-bangla_2025-04-02_0dkjfnt8_SYLHETDH048620250402SYLHET-PIC-10.JPG.avif
আনোয়ার হোসেন
ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র ভোলাগঞ্জ সাদাপাথরেফাইল 

পর্যটনে মন্দা ভাব চলছে দেশে। দেশের পর্যটন ব্যবসার বড় অংশই এখন দেশি পর্যটকনির্ভর হয়ে পড়েছে। এ কারণে বিদেশ থেকে আসা বিদেশি পর্যটকদের খরচও কমে গেছে। এক বছরে পর্যটন খাতে বিদেশি পর্যটকদের খরচ কমেছে ১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১২২ টাকা হিসেবে দেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৫৯ কোটি টাকা।

সম্প্রতি প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। যাতে দেশ ও অঞ্চলভেদে বিভিন্ন সূচকের অবস্থান প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে আয় করেছিল ৪৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালে এই আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪ কোটি ডলারে। খাত–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত বিদেশি পর্যটক আসা কমে যাওয়ায় এই খাত থেকে আয়ও কমে গেছে। বিদেশিরা বাংলাদেশে এসে থাকা–খাওয়া ও ঘোরাঘুরি বাবদ যে অর্থ ব্যয় করেন, সেটি বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে বাংলাদেশের আয় হিসেবে ধরা হয়।

এডিবির প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটানসহ বাংলাদেশের পর্যটন খাতের আয় ও পর্যটকের আগমন সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন ভারতে। তারপরের অবস্থান মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার। ভারত ২০২৩ সালে বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে আয় করেছিল ৩ হাজার ২২০ কোটি ডলার। ২০২৪ সালে এই আয় বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৫০২ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে শ্রীলঙ্কায় এই আয় ১০১ কোটি ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩১৭ কোটি ডলারে।

বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে আয় কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, দেশের পর্যটনে বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ এখন আশানুরূপ নয়। অনলাইন বা ইলেকট্রনিক ভিসা সুবিধা দেওয়া গেলে বিদেশি পর্যটকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করা যেত। সেই সঙ্গে দেশের পর্যটন স্থানগুলোর সঠিক প্রচারণার অভাব রয়েছে। বিদেশে সুন্দরবন, কক্সবাজারসহ দেশের বিশেষ পর্যটন এলাকা, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং ধর্মীয় তীর্থস্থানগুলোর প্রচারণা বাড়ানো গেলে ভ্রমণপিপাসুদের আগমন বাড়বে। এ ছাড়া বিদেশি পর্যটক কমে যাওয়ার পেছনে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতারও একটা বড় প্রভাব রয়েছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে গেলে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি পর্যটক উভয়ই বাড়বে।

এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় ১ কোটি ৭৪ লাখ পর্যটক দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ৩৩ লাখে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালে প্রকাশিত ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশি–বিদেশি মোট ১৬ লাখ ৪০ হাজার পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। তাঁদের মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) পর্যটক ১৩ লাখ ৫০ হাজার, যা শতাংশের হিসাবে ৮০ শতাংশের বেশি। আর বিদেশি পর্যটক ২ লাখ ৯০ হাজার, যা শতাংশের হিসাবে প্রায় ২০ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে ৭২ শতাংশ পর্যটক আকাশপথে ভ্রমণ করেন। বাকি ২৮ শতাংশ ভ্রমণ করেন স্থলপথে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক (বিপণন ও ব্র্যান্ডিং) মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘কোভিড–পরবর্তী সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটনে ইতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হয়েছে। ১০ বছরে দেশের আন্তর্জাতিক পর্যটন থেকে আয় পাঁচ গুণ বেড়েছে। তবে আয়ের এই ধারা ধরে রাখতে নতুন বিপণন কৌশল খুঁজে বের করা, প্রচার কার্যক্রমে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, নতুন পর্যটন উৎস এবং পর্যটন উৎসভিত্তিক প্রচার ও বিপণন কার্যক্রমে বৈচিত্র্য আনতে গুরুত্ব দিতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top