ব্রাজিল বাড়ির মালিক’ জয়নাল: চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে কোটি টাকার সম্পদের মালিক!

amarbholanews-photo-brasilbari-web.jpg
আনোয়ার হোসেন

নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সেই বিখ্যাত ‘ব্রাজিল বাড়ি’ আবার আলোচনায়। যমুনা অয়েল কোম্পানির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জয়নাল আবেদীন ওরফে টুটুল, যিনি ব্রাজিলের পতাকার রঙে রাঙানো বাড়ির জন্য একসময় আলোচনায় এসেছিলেন, এখন দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্তের মুখে।

সরকারি তেল চুরি, অবৈধ আয়, জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয়সহ নানা অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

সূত্র জানায়, জয়নালের মাসিক বেতন ভাতা মিলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার মতো। অথচ তাঁর নামে ও আত্মীয়স্বজনদের নামে রয়েছে জমি, বাড়ি, জাহাজ, ট্যাংক–লরি, বিলাসবহুল গাড়ি ও বিপুল পরিমাণ সম্পদ।

‘ব্রাজিল বাড়ি’র গল্প

ফতুল্লার ধনিয়ায় ছয়তলা বাড়িটি আঁকা ব্রাজিলের পতাকার রঙে। ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে এটি পরিণত হয়েছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ঢাকায় ব্রাজিলের তৎকালীন রাষ্ট্রদূতও একবার বাড়িটি পরিদর্শন করেছিলেন।

কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর ওই বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

তেল চুরির সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ

তেল কোম্পানির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ডিপো থেকে তেল চুরি হয় দুটি উপায়ে—
1️⃣ তাপমাত্রা বাড়ায় তেল বাড়তি হলেও হিসাব না দেখানো,
2️⃣ তেলের একাংশ বিক্রি করে ভেজাল মিশিয়ে ঘাটতি পূরণ করা।

জয়নাল ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন শ্রমিকনেতা এই চক্রের মূল বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিলাসী জীবন ও অভিযোগ

বেতন–ভাতা দিয়ে সম্ভব নয় এমন বিলাসী জীবনযাপন করছেন জয়নাল। সূত্র জানায়, তাঁর নামে রয়েছে—

  • ৬ তলা ব্রাজিল বাড়ি,

  • দ্বিতীয় ভবন ও ব্যক্তিগত অফিস,

  • দুটি জাহাজ ও দুটি ট্যাংক–লরি,

  • প্রিমিও মডেলের গাড়ি,

  • গ্রামের বাড়িতে পুকুর, এসি রুম ও সিসিটিভি নেটওয়ার্ক।

দুদকের প্রাথমিক তদন্তে আরও পাওয়া গেছে—কেরানীগঞ্জ, রূপগঞ্জ, সাভার ও নারায়ণগঞ্জে তাঁর ও আত্মীয়দের নামে একাধিক জমি ও ফ্ল্যাট।

তদন্তে বিপিসি ও দুদক

ফতুল্লা ডিপোর ৩ লাখ ৭৫ হাজার লিটার ডিজেল গায়েবের ঘটনায় জয়নালের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিপিসি ও দুদক আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন,

“তেল চুরির অভিযোগ তদন্তাধীন। অভিযুক্তদের সম্পদের উৎস খুঁজে বের করা হবে।”

‘বেতন–ভাতা দিয়ে তো এত সম্পদ হয় না’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম বলেন,

“তেল কোম্পানিগুলো অত্যন্ত অস্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের উৎস অনুসন্ধান করা জরুরি। বেতন–ভাতা দিয়ে তো এত সম্পদ হয় না।”

চতুর্থ শ্রেণির চাকরি থেকে কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া জয়নালের গল্প এখন পুরো জ্বালানি খাতে আলোচনার বিষয়। তাঁর সম্পদের উৎস, তেল চুরির চক্র, এবং প্রশাসনের নীরব ভূমিকা—সবকিছুই এখন তদন্তের আওতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top