সভায় কমিটির ৮ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের সবাই কলেজটিতে ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন নিয়ে আপত্তি জানান। তবে আপত্তির পরও কলেজটিতে ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন দেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
মঞ্জুরি কমিটির আপত্তি সত্ত্বেও চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি কলেজে ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন দিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। ইতিমধ্যে ইংরেজি ভার্সনে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞাপনও দিচ্ছে কলেজটি। ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ। এটি অবস্থিত চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এক্সেস সড়কে।
মঞ্জুরি কমিটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কলেজটির নিজস্ব ভবন নেই। যেটি আছে সেটি ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি। এমন একটি কলেজে ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন দূরে থাক, বাংলা ভার্সনের অনুমোদন দেওয়ারও কথা নয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের ইংরেজি ভার্সন অনুমোদনের জন্য গত ২৮ জুলাই সভায় বসে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা অনুযায়ী গঠিত ৯ সদস্যের মঞ্জুরি কমিটি। সভায় কমিটির ৮ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের সবাই কলেজটিতে ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন নিয়ে আপত্তি জানান। তবে আপত্তির পরও কলেজটিতে ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন দেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। যদিও মঞ্জুরি কমিটির বৈঠকে তিনি নিজেও কলেজটিতে ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।
আগস্টের ১ তারিখ থেকে কলেজটি তাঁদের ফেসবুক পেজে ইংরেজি ভার্সনে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিতে শুরু করে। এর আগে কোনো বিজ্ঞাপনে ইংরেজি ভার্সনের কথা উল্লেখ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাদশ শ্রেণির ভর্তির ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, বিজ্ঞান কলেজের বাংলা ভার্সনে ২০০টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ৮০টি আসন রয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, একটি সরু গলির ভেতর দিয়ে একটি ছয়তলা ভবন। এর মধ্যে তিনটি ফ্লোরে শিক্ষা কার্যক্রম চলে, বাকি তিনটি ফ্লোরে কক্ষ নির্মাণাধীন। এ ভবনেই পরিচালিত হচ্ছে দুটি কলেজ। চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ ছাড়া অপরটির নাম—চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরিদুল আলম বলেন, ২৮ জুলাই তাঁরা ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন পেয়েছেন। দুই ভার্সন মিলয়ে ২৮০টি আসন রয়েছে। আগে বাংলা ভার্সনে আসন ছিল ৩০০টি। এ বছর সেটি কমিয়ে ২০০টি করা হয়েছে।
আগস্টের ১ তারিখ থেকে কলেজটি তাঁদের ফেসবুক পেজে ইংরেজি ভার্সনে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিতে শুরু করে। এর আগে কোনো বিজ্ঞাপনে ইংরেজি ভার্সনের কথা উল্লেখ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাদশ শ্রেণির ভর্তির ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, বিজ্ঞান কলেজের বাংলা ভার্সনে ২০০টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ৮০টি আসন রয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান বা একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ৯ সদস্যের মঞ্জুরি কমিটি গঠনের নিয়ম রয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা হলেন সংশ্লিষ্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, কলেজ পরিদর্শক, বিদ্যালয় পরিদর্শক, একজন সরকারি কলেজের (ডিগ্রি পর্যায়) অধ্যক্ষ, একজন বেসরকারি কলেজের (ডিগ্রি পর্যায়) অধ্যক্ষ, একজন বেসরকারি কলেজের (উচ্চমাধ্যমিক) অধ্যক্ষ এবং বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি একজন প্রতিনিধি।
কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনুমোদনের সভায় সেদিন বোর্ড কর্মকর্তাদের বাইরে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ, নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ, পটিয়া খলিলুর রহমান মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তবে অনুপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি। বৈঠকে সবাই চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজে ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন নিয়ে আপত্তি জানান।
কলেজটির নিজস্ব ভবন নেই। তাঁদের বাংলা ভার্সনের অনুমোদন নিয়েই কথাবার্তা রয়েছে। সভায় চেয়ারম্যান, সচিব সবাই আপত্তি জানিয়েছেন; কিন্তু সভার সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে, কেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কলেজটিতে ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন দিল তা বোধগম্য নয়।
মো. শাহ আলমগীর, মঞ্জুরি কমিটির সদস্য
কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহ আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলেজটির নিজস্ব ভবন নেই। তাঁদের বাংলা ভার্সনের অনুমোদন নিয়েই কথাবার্তা রয়েছে। সভায় চেয়ারম্যান-সচিব সবাই আপত্তি জানিয়েছেন; কিন্তু সভার সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে, কেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কলেজটিতে ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন দিল তা বোধগম্য নয়।’
অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্জুরি কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষক নিয়োগের শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শর্ত পূরণ করতে না পারলে অনুমোদন বাতিল হয়ে যাবে।
শিক্ষা বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তে উদ্বেগজনক বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আমির উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে কলেজের বাংলা ভার্সন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, সেখানে ইংরেজি ভার্সনের অনুমোদন দেওয়া আরও উদ্বেগজনক। এটি শিক্ষার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।’