মাথাপিছু জিডিপিতে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম

prothomalo-bangla_2020-10_2f0e41b6-2a0b-4c1e-8ec6-ef7b0b969b83_prothomalo_bangla_2020_09_9b37ee90_53a4_44f7_9ab7_b65272646adc_GDP_2.avif
আনোয়ার হোসেন

গত দেড় দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। তারপরও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে মাথাপিছু জিডিপির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। শুধু পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর প্রধান অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সেখানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দেড় দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি প্রতিবছরই বেড়েছে। ২০২৪ সালের সর্বশেষ হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি এখন ২ হাজার ৬২৫ মার্কিন ডলার।

মাথাপিছু জিডিপি হলো একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনকে (জিডিপি) দেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যা পাওয়া যায়, সেটি। সহজভাবে বললে, দেশের মোট উৎপাদিত সম্পদের মধ্যে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য গড় কতটুকু অর্থ বা সম্পদ তৈরি হয়েছে, সেটি হলো মাথাপিছু জিডিপি।

এই আয় সরাসরি ব্যক্তির হাতে পাওয়া অর্থ নয়। তবে এটি জীবনযাত্রার মান ও দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বোঝার একটি মাপকাঠি হিসেবে কাজ করে। বেশি মাথাপিছু জিডিপি সাধারণত ইঙ্গিত দেয় যে দেশের অর্থনীতি বড় এবং গড়ে একজন নাগরিকের জন্য বেশি সম্পদ ব্যবহার উপযোগী রয়েছে।

এডিবির প্রতিবেদনে ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু জিডিপি হিসাব করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মাথাপিছু জিডিপিতে শীর্ষে রয়েছে মালদ্বীপ। এই দ্বীপরাষ্ট্রের নাগরিকদের মাথাপিছু জিডিপি হচ্ছে ১১ হাজার ডলারের বেশি। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা; দেশটির মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৪ হাজার ৫১৬ ডলার। এ ছাড়া প্রায় ৪ হাজার ডলার নিয়ে ভুটান তৃতীয় ও ২ হাজার ৮০০ ডলার নিয়ে ভারত চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।

তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে দেশটির মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬২৫ ডলারে; ২০১০ সালে যা ছিল ৮৮২ ডলার। অর্থাৎ দেড় দশকে মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। বাংলাদেশের পরে রয়েছে যথাক্রমে পাকিস্তান (১ হাজার ৫৮২ ডলার), নেপাল (১ হাজার ৪৩৪ ডলার) ও আফগানিস্তানের (৪০০ ডলারের বেশি) অবস্থান।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, মাথাপিছু জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উৎপাদন বৃদ্ধির একটি প্রতিফলন। মাথাপিছু জিডিপির ধারাবাহিক উত্থান ইঙ্গিত করে যে দেশের অর্থনৈতিক সুবিধা জনগণের মাঝে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।

মাথাপিছু জাতীয় আয়ও বেড়েছে

এডিবির প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় নিয়েও তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, গত দেড় দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় বেড়ে প্রায় সাড়ে তিন গুণ হয়েছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় ছিল ৭৮০ ডলার। ২০২৪ সালে তা বেড়ে ২ হাজার ৮২০ ডলার হয়েছে।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এশিয়ায় প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের দিক থেকে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আর পিছিয়ে রয়েছে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে।

মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) হলো একটি দেশের নাগরিকেরা দেশে ও বিদেশে যা আয় করেন, তার গড় হিসাব। অর্থাৎ দেশের ভেতরে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্য থেকে পাওয়া আয় এবং বিদেশে কর্মরত নাগরিকেরা যে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স পাঠান—সব মিলিয়ে দেশের মোট আয়কে দেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যে হিসাব পাওয়া যায়, সেটিই মাথাপিছু জিএনআই। দেশের আয়ের পূর্ণ চিত্র বোঝার জন্য জিএনআইয়ের হিসাব ব্যবহার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top