রোগীদের জন্য ১৭ কোটি টাকার ওষুধ এনে দিলেন শীর্ষ শ্রেয়ান

1756404847-3c9cdcf7bb4affa2cee9edf6f791ddec.webp
আনোয়ার হোসেন
এমবিবিএস পাস করেছেন, ইন্টার্নশিপ করছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। অথচ যে উদ্যোগ ও উদ্যম তিনি দেখিয়েছেন, তা স্বাভাবিকভাবে একজন ইন্টার্নের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। শীর্ষ শ্রেয়ান নামের এই তরুণ চিকিৎসক দাতাসংস্থার সহায়তায় সংগ্রহ করেছেন স্ট্রোক ও হৃদরোগীদের জন্য ১৭ কোটি টাকার ওষুধ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিমত, ইন্টার্ন চিকিৎসক হয়েও উদ্যোগের দিক দিয়ে শীর্ষ সবার শীর্ষে। এই হাসপাতালের আর কোনো ইন্টার্ন চিকিৎসক কখনো এটি করে দেখাতে পারেননি। শীর্ষ শ্রেয়ানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। বাবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তাই তার বেড়ে ওঠা সাভারে। শীর্ষ রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে। জুলাইয়ে এমবিবিএস শেষ করে এখন ইন্টার্নশিপ করছেন। শীর্ষের কারণে রামেক হাসপাতাল গত সোমবার আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা থেকে আড়াই হাজার ভায়াল আল্টেপ্লেস পেয়েছে। আল্টেপ্লেস হলো একটি থ্রোমবোলাইটিক ওষুধ, যা সাধারণত স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ফলে রক্তনালিতে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্ত মুক্ত করতে ইনজেকশন আকারে ব্যবহার করা হয়। এটি রক্তের মধ্যে জমে থাকা থ্রম্বাস বা ব্লক দূর করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতেও সাহায্য করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আড়াই হাজার ভায়াল আল্টেপ্লেস বিনামূল্যেই পেয়েছে। যার দাম প্রায় ১৭ কোটি টাকা।

চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশে শুধু একটি কোম্পানি এই ওষুধ বাজারজাত করে। ৫০ মিলিগ্রামের ইনজেকশন ও ইনফিউশনের প্রতি ভায়ালের দাম পড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। রোগীর ওজন ৬০ কেজির বেশি হলে প্রয়োজন পড়ে দুই ভায়াল। স্ট্রোকের রোগীদের রক্ত জমাট বেঁধে গেলে সাড়ে ৪ ঘণ্টা ও হৃদরোগীদের সাড়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যে এটি প্রয়োগ করতে হয়। দরিদ্র অনেক রোগীই দামি এই ওষুধ কিনে প্রয়োগ করতে পারেন না। স্ট্রোক প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং তা নিয়ে গবেষণা করে ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএসও)। এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শীর্ষ শ্রেয়ান তাদের একটি গবেষণা দলের সঙ্গে যুক্ত হন। ওই গবেষণা প্রকল্পে শীর্ষ গবেষণা সহকারী ছিলেন। পরে গবেষণাপত্রটি জার্নালে প্রকাশিত হয়। এটি ২০২৪ সালের অক্টোবরে সেরা গবেষণা নির্বাচিত হয়। এটি দেখে আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা ডিরেক্ট রিলিফের এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নের ডিরেক্টর গর্ডন উইলকক অস্ট্রেলিয়া থেকে গত মার্চে শীর্ষকে ই-মেইল করেন। জানান, তারা রামেক হাসপাতালকে আল্টেপ্লেস অনুদান দিতে চান। সেটি নেওয়া, সংরক্ষণ করা ও রোগীদের প্রয়োগের মতো সক্ষমতা এই হাসপাতালের আছে কি না। ইন্টার্ন চিকিৎসক শীর্ষ তখন বিষয়টি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আযাদের সঙ্গে আলাপ করেন। পরে গর্ডন উইলককের সঙ্গে তারা ভার্চুয়াল বৈঠক করেন।

শীর্ষ শ্রেয়ানের মেন্টার অধ্যাপক আজিজুল হক আযাদ বলেন, ‘শীর্ষ যখন আমাকে বিষয়টা জানাল, তখন থেকেই আমিও বিষয়টা নিয়ে খুব উৎসাহিত ছিলাম। আমরা রোগীদের জন্য এটা করতে চেয়েছিলাম। এটা যে রোগীরা একেবারে বিনামূল্যে পাচ্ছেন। অথচ অনেক দামি বলে অনেকেই কিনতে পারেন না।’

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ জানান, বুধবার থেকেই এই ওষুধ রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। খবর নিয়ে জেনেছেন, বিকাল পর্যন্ত ৭০ ভায়াল ব্যবহার হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই কৃতিত্ব শীর্ষর। সে অত্যন্ত মেধাবী।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top