‘সংগম’ ও ‘বাহানা’ আর্কাইভে নেই

songram.avif
আনোয়ার হোসেন

চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের দুই উর্দু চলচ্চিত্র ‘সংগম’ ও ‘বাহানা’ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে নেই কেন?
‘সংগম’ ও ‘বাহানা’ পরিচালনা করেছেন জহির রায়হান

‘কখনো আসেনি’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘বেহুলা’ থেকে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’—জহির রায়হানের বেশির ভাগ চলচ্চিত্র বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সংগ্রহে রয়েছে। তবে মুক্তির ছয় দশক পরও ‘সংগম’ ও ‘বাহানা’র মতো চলচ্চিত্র আর্কাইভে নেই। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের পরিচালক ফারহানা রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছবি দুটি আমাদের সংরক্ষণে নেই। অ্যানালগ কিংবা ডিজিটাল—কোনো ভার্সনই আমাদের কাছে নেই।’

দুই পাকিস্তানের প্রথম রঙিন সিনেমা ছিল ‘সংগম’। ছবিটি ১৯৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল মুক্তি পায়। লিটল সিনে সার্কেলের প্রযোজনায় ছবিটি পরিচালনা করেছেন জহির রায়হান। চিত্রগ্রহণ করেছেন আফজাল চৌধুরী। এতে রোজী, হারুন, সুমিতা, খলিলসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন।

ছবিটি ঢাকার গণ্ডি পেরিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানেও দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলেছিল। ছবিটি পশ্চিম পাকিস্তানের হলগুলো চালাতে চায়নি। শুরুতে একটি হল ভাড়া করে চালানো হয়েছিল, পরে অন্য হলগুলো ছবিটি লুফে নেয়। করাচির ইস্টার্ন ফিল্মসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় ছবিটির রিভিউ প্রকাশিত হয়।

সংগম সিনেমার পোস্টার

১৯৬৫ সালের ১৩ এপ্রিল মুক্তি পায় জহির রায়হানের আরেক উর্দু সিনেমা ‘বাহানা’। বলা হয়, এটি পাকিস্তানের প্রথম সিনেমাস্কোপ সিনেমা। এই ছবিও প্রযোজনা করেছে লিটল সিনে সার্কেল। এতে রহমান, কবরী, জাকারিয়াসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন। চিত্রগ্রহণ করেছেন আফজাল চৌধুরী।

চলচ্চিত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে ফিল্ম আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ সরকার। দুষ্প্রাপ্য ও ধ্রুপদি চলচ্চিত্র সংগ্রহের পাশাপাশি সেসব ছবি ডিজিটাল সংস্করণে রূপান্তর করে প্রতিষ্ঠানটি। এখন পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্র ফিল্ম আর্কাইভে জমা রয়েছে।

ফিল্ম আর্কাইভে থাকা জহির রায়হানের সাতটি ছবির তালিকা পেয়েছে প্রথম আলো। ছবিগুলো হলো—‘কখনো আসেনি’, ‘বেহুলা’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘আনোয়ারা’, ‘মনের মতো বউ’ (আংশিক), ‘জীবন থেকে নেয়া’ ও ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ (আংশিক)।

বাহানা’র বুকলেট কাভার
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের পরিচালক ফারহানা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফিল্ম আর্কাইভ যেটা করে, কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যখন জমা দেয়, সেই ছবি ডিজিটালে রূপান্তর করে আমরা আর্কাইভে রাখি। যদি আর্কাইভে কোনো ছবি না পাওয়ায় যায়, ধরে নিতে হবে, ছবির স্বত্বাধিকারী ছবিটি জমা দেননি।’

এর বাইরে অনেক ছবি উদ্ধারও করে ফিল্ম আর্কাইভ। ফিল্ম আর্কাইভের সাবেক কর্মকর্তা ফখরুল আলমের দাবি, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ‘সংগম’ ও ‘বাহানা’ উদ্ধার করতে পারেননি তাঁরা। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। হন্যে হয়ে খুঁজেছি, পাইনি। কেউ জানে না, কোথাও পাইনি।’

বিশ্লেষকদের ধারণা, ছবিগুলোর মূল প্রিন্ট নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে উদ্ধার করা সম্ভবপর হয়নি।

ফখরুল আলমের ভাষ্য, ‘সংগম ছবিটি হিট করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তানেও ছবিটি ব্যাপকভাবে চলেছিল; তবে শুরুতে কোনো হলই ছবিটি চালাতে চায়নি। হল ভাড়া করে চালিয়েছিল পরিবেশকেরা। দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানের হলগুলো ছবিটি লুফে নেয়।’


জহির রায়হান

‘সংগম’ আছে, ‘বাহানা’ নেই

ছবি দুটি বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে না থাকলেও ব্যক্তিগত পরিসরে ‘সংগম’–এর খোঁজ মিলেছে। প্রথম আলোকে ছবিটির খোঁজ দিয়েছেন চলচ্চিত্র গবেষক মীর শামছুল আলম।

তিনি গতকাল জানান, ছবির অভিনেতা হারুন মাঝেমধ্যে পাকিস্তানে যেতেন। তিনি পাকিস্তান থেকে ছবিটির ভিএইচএস ক্যাসেট নিয়ে এসেছিলেন। ১৯৯২ সালে জার্মান কালচারাল সেন্টারে ছবিটির প্রদর্শনী হয়েছিল। পরে ছবিটি ডিজিটালে রূপান্তর করেছেন তিনি। সেটি তাঁর কাছে সংরক্ষিত আছে।

মীর শামছুল আলম বলেন, ‘সংগম’ পাওয়া গেলেও বাহানার কোনো খোঁজ তিনি এখনো পাননি।

পরিবারের কাছেও ‘বাহানা’ নেই বলে জানান জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান। তবে পরিবারের কাছেও ‘সংগম’–এর একটি ভিএইচএস ক্যাসেট ছিল বলে জানান তিনি।

গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাহানা ও সংগম—কোনোটিরই প্রিন্ট আমাদের কাছে নেই। তবে ১৯৯৯ কিংবা ২০০০ সালের দিকে সংগম–এর একটি ভিএইচএস ক্যাসেট করাচি থেকে সংগ্রহ করেছিলেন শাহরিয়ার কবির চাচা (জহির রায়হানের চাচাতো ভাই)। ওটার কালার ভালো ছিল। সেটা আমরা আর্কাইভ করার পরিকল্পনা করেছিলাম। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০০৪ সালে মা (সুমিতা দেবী) মারা গেলেন, দ্রুত আমাদের বাসাও ছাড়তে হলো। ক্যাসেটটার আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আর বাহানার কিছুই পাওয়া যায়নি।’

‘সংগম’ ও ‘বাহানা’ ছাড়াও জহির রায়হানের আরেক চলচ্চিত্র ‘সোনার কাজল’ও ফিল্ম আর্কাইভে নেই। ছবিটি কলিম শরাফীর সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেছিলেন জহির রায়হান।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top