হেটার্সরা আমার কাজের ফোকাস নষ্ট করতে চায়

prothomalo-bangla_2025-08-19_cioxa5mm_IMGL9843.avif
আনোয়ার হোসেন

 

যুক্তরাষ্ট্র থেকে শো করে এলেন। কেমন ছিল এবারের অভিজ্ঞতা?

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি: পেনসিলভানিয়া, টেক্সাস ও মিশিগান—তিনটি অঙ্গরাজ্যের তিন শহরে শো করেছি। অভিজ্ঞতা দুর্দান্ত। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যেই অনেক বাঙালি। বাংলাদেশের কোনো শো হলে এসব অঙ্গরাজ্যের দূরদূরান্ত থেকে সবাই আনন্দ নিয়ে ছুটে আসে, অনুষ্ঠান উপভোগ করে শুনলাম। ওখানে বাঙালি কমিউনিটি অনেক বড়, মিশিগানে আমরা যেখানে শো করেছি, ২০ হাজারের মতো দর্শক ছিল। শোর পাশাপাশি ঘুরে বেড়িয়েছি, আমার খালা থাকেন বাফেলোতে, ওখানে দারুণ সময় কেটেছে।

অনেক দিন ধরে নতুন কোনো কাজের খবরে পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ চাউর, নতুন ছবিতে অভিনয় শুরু করছেন। সিনেমা কিংবা ওটিটি—কোনটির কাজ এর মধ্যে শুরু করবেন?

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি: চার-পাঁচটি সিনেমা নিয়ে কথা চলছে। গল্প শুনেছি, পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। এবার আমি প্রেমের গল্পে বেশি আগ্রহী, প্রস্তাবও পাচ্ছি। যেহেতু এখন মানুষ আবারও ভালোবাসার গল্প দেখতে চাইছে, তাই প্রেমের গল্পটায় ঝোঁক বেশি। ওটিটি নিয়ে নতুন করে কথা হচ্ছে না। মাঝের সময়ে হয়েছিল, একটাও ব্যাটে–বলে মেলেনি, যে জন্য করতে পারিনি।

পবিত্র ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া ‘জংলি’ ছবিটি আলোচনায় ছিল, ছবিতে আপনি অভিনয় করেন সিয়ামের বিপরীতে। ছবিটি নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট ছিলেন?

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি: আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম, ছবির যা ক্লাইম্যাক্স, এরপর সবাই জংলি (সিয়াম) আর পাখি (শিশুশিল্পী নৈঋতা) চরিত্র নিয়ে কথা বলবে। কিংবা একজন বাবা-মেয়ের বন্ডিং নিয়ে কথা বলবে। প্রথম যেদিন দর্শক সেজে সিনেমা দেখতে পরিবারের সবার সঙ্গে গিয়েছিলাম, সেদিন ভুল ভাঙে। সিনেমা শেষ হওয়ার আগে আমার পেছনে মধ্যবয়সী একদল নারীর কথাবার্তা শুনতে পাই। তারা বলছিল, জনিকে (সিয়াম) তো নূপুরই (দীঘি) নষ্ট করেছে, নইলে তো শেষে এ রকম হতো না। তখনই বুঝলাম, নূপুর চরিত্রটা অনেক প্রভাব ফেলছে, জনি থেকে জংলি হয়ে ওঠা, দর্শকের অসন্তোষ নূপুরের ওপর আসছে। তারপর একের পর দর্শকের দেখা এবং প্রশংসা—সব মিলিয়ে বলব, আমার চাওয়া থেকে পাওয়া অনেক বেশি ছিল।

সিয়ামের সঙ্গে নতুন ছবিতে অভিনয়ের কথা শোনা যাচ্ছে…

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি: আমি যখন খবরটা প্রথম শুনি, তখন দেশের বাইরে ছিলাম। তবে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত কিছুই হয়নি। দেখা যাক, আশা করি ভালো কিছুই হবে। সিয়ামের সঙ্গে আবার সিনেমা মন্দ হবে না।

একটা সময় ছিলেন শিশুশিল্পী। এখন আপনি নায়িকা। ক্যারিয়ারের শুরুতে যে অভিজ্ঞতাগুলো হয়েছে, এখনকার অভিজ্ঞতার সঙ্গে কীভাবে তা ভিন্ন?

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি: পুরোটাই ভিন্ন। ছোটবেলার অভিজ্ঞতা তো না বুঝে অভিজ্ঞতা। তখন বুঝতামও না কী হচ্ছে। শুটিংয়ে সবাই আদর করছে, স্নেহ করছে, এটা অভিজ্ঞতা। এখন হচ্ছে, আমাকে অনেক বুঝেশুনে কাজ করতে হয়। এখন আমি অনেক পরিণত। তখন ছিলাম শিশুশিল্পী, এখন নায়িকা। এখন তো পোস্ট প্রি-প্রোডাকশন, শুটিং, প্রোডাকশন থেকে সবকিছুতে যুক্ত থাকতে হয়। শিশুশিল্পী হিসেবে যখন কাজ করতাম, তখন শুটিং করে চলে যেতাম। এখন টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অনেক বেশি রাখতে হয়, তাই অভিজ্ঞতাও অন্য রকম।

নায়িকা হিসেবে কোন ধরনের চরিত্রে নিজেকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য মনে হয়?

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি: রোমান্টিক-ড্রামা ঘরানার সিনেমায়। এ ধরনের চরিত্রে সহজেই মানিয়ে নিতে পারি। তবে আমি চাই, সবাই আমাকে চ্যালেঞ্জ দিক। কমফোর্ট জোন থেকে বের করে নিয়ে আসুক। আমাকে নতুন সব চরিত্র দিক, লুক বদলে ফেলুক।

সময়ের সঙ্গে সবার মধ্যে একটা পরিবর্তন আসে। তারকাখ্যাতির কারণে আপনার ব্যক্তিজীবনে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে?

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি: ব্যক্তিজীবনের পরিবর্তন খুব একটা অনুভব করি না। ক্যামেরার সামনে হয়তো আমি নায়িকা, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজনের কাছে এখনো সেই ছোট মানুষই আছি। দেখা যায় যে এখনো আমি যদি তাদের সামনে বড় মানুষের মতো কথা বলতে যাই, তারা পাত্তা দেয় না (হাসি)। আরে, ও তো ছোট মানুষ, ও কী বলবে, কী বুঝবে—এসব।

তারকাদের নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা বা ট্রল হয়। এগুলো কীভাবে মোকাবিলা করেন?

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি: একটা সময় খুব মন খারাপ থাকত। ভেঙে পড়তাম। ভাবতাম, কেন ট্রল হচ্ছে, আমি তো ট্রল হওয়ার মতো কিছু করিনি। পরে দেখলাম যে শাকিব খানকে নিয়েও ট্রল হয়, জয়া আহসানকে নিয়েও হয়। অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, এমনকি আমার প্রিয় রণবীরকে নিয়ে ট্রল হয়। যেটা বুঝলাম যে কিছু মানুষের ধরনই এ রকম, অন্যকে ট্রল করে বেড়ায়। যারা ট্রল করে, তারা আসলে খুবই অসফল, হতাশাগ্রস্ত; সফলদের দেখে তাদের ঈর্ষা হয়। এই ঈর্ষাকাতরতা থেকে তারা এমনটা করে। আমার কাছে এ–ও মনে হয়, হেটার্স থাকা খুবই স্বাভাবিক। একজন মানুষকে পৃথিবীর সবাই ভালোবাসবে, তা মোটেও ঠিক নয়। এই জিনিসটা যদি আমি নেগেটিভলি নিই, গায়ে মাখিয়ে ফেলি, তাহলে আমি হতাশ থাকব, কাজে ফোকাস দিতে পারব না। হেটার্সরা আমার কাজের ফোকাস নষ্ট করতে চায়। তাই এদের প্রাধান্য দেওয়াটা বোকামি। হেটার্সদের কথাকে তাই আমি আমার শক্তি হিসেবে ব্যবহার করি।

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি | শিল্পীর সৌজন্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top