শৈশবেই সাঁতার, শাস্ত্রীয় নৃত্যসহ নানা বিদ্যা রপ্ত করেছিলেন শ্রিয়া পিলগাঁওকর। তবে বাবা শচিন পিলগাঁওকর আর মা সুপ্রিয়া পিলগাঁওকরের পথ অনুসরণ করে শেষ পর্যন্ত অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। শুধু অভিনয় নয়, প্রযোজনা, পরিচালনা আর লেখালেখিতেও সমান আগ্রহী এই তারকা। তবে অভিনেত্রী হিসেবেই সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে একের পর এক সাফল্যের গল্প লিখে চলেছেন ভারতীয় গণমাধ্যম নব ভারত টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী হয়ে ওঠার যাত্রা, সাফল্য-সংগ্রাম আর ব্যক্তিজীবনের নানা দিক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।
মারাঠি ছায়াছবি ‘একুলটি এক’ দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করেছিলেন শ্রিয়া। তবে বলিউডে তাঁর অভিষেক হয় শাহরুখ খানের হাত ধরে, কিং খানের ‘ফ্যান’ ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। শুধু হিন্দি নয়, তামিল, তেলেগু, মারাঠি, এমনকি ফরাসি ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। তবে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ওটিটির মাধ্যমে। তাঁর ঝুলিতে আছে ‘মির্জাপুর’, ‘গিলটি মাইন্ডস’, ‘দ্য ব্রোকেন নিউজ’, ‘ক্র্যাকডাউন’, ‘মান্ডালা মাডারস’-এর মতো সফল সিরিজ।

অভিনয়ের পথচলার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে শ্রিয়া বলেন, ‘অভিনেতা হয়ে বাঁচতে হলে মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী হতে হয়। অনেকে মনে করেন, আমাদের জীবনে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, আমরা গ্ল্যামার আর খ্যাতির মধ্যে থাকি। কিন্তু আমরা ৯টা-৫টার চাকরি করি না। কখনো মাসের পর মাস টানা কাজ করি, আবার কখনো কোনো কাজ থাকে না। তখন বেকার হয়ে বাড়িতে বসে থাকতে হয়। সেই সময় আপনি কীভাবে নিজেকে সামলান, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার বাবা একজন অভিনেতা, প্রযোজক আর পরিচালক। বাবার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি আমি।’
শ্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরতে ভালোবাসেন। তবে পর্দায় পুরোদস্তুর রোমান্টিক চরিত্রে এখনো সুযোগ পাননি তিনি। এই আক্ষেপ তাঁর, ‘আমি চাই রোমান্টিক ছবিতে অভিনয় করতে। তবে সামনের দিনগুলোতে যদি এ ধরনের প্রস্তাব না আসে, আমি নিজেই একটি প্রেমের গল্প লিখব। চেষ্টা তো করব আগে, জানি না কী হবে।’
আজ শ্রিয়া যেখানে দাঁড়িয়ে, এর পেছনে মা–বাবার নিঃশর্ত সমর্থনকেই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখেন তিনি। ‘আমি ভিন্ন এক জীবন কাটিয়ে এসেছি। জীবনের প্রথম ১০ বছর সুইমিংপুলেই কেটেছে। রাজ্য স্তরের সাঁতারু ছিলাম আমি। তখন খেলোয়াড়ের মতো জীবন যাপন করেছি। তবে সব সময় মা–বাবার সাপোর্ট পেয়েছি। ওনারা সব সময় বলতেন জীবনের নানা দিককে অন্বেষণ করতে। মা-বাবা কখনো চাপ দেননি। কী হব, সেটা আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। কত্থক শেখার সময়ই আমি অনুভব করেছিলাম, আমাকে অভিনয় করতে হবে,’ অকপট শ্রিয়া।

অভিনয়ের পাশাপাশি নাচকেও সমানভাবে উপভোগ করেন শ্রিয়া। এখানেও আক্ষেপ আছে—নিজের নৃত্যশৈলী এখনো সেভাবে পর্দায় তুলে ধরতে পারেননি তিনি। তাঁর আশা, সামনে কোনো দিন সেই সুযোগ মিলবে। শ্রিয়ার ভাষ্যে, ‘আমি প্রার্থনা করি যে আমার মধ্যে যতটা কত্থক নাচের প্রতিভা আছে, তা যেন একদিন পর্দায় মেলে ধরতে পারি। তবে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি। কারণ, গত কয়েক বছরে দারুণ দারুণ চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আক্ষেপও আছে—এখন পর্যন্ত তথাকথিত বলিউডি মাসালা ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ হয়নি আমার।’

শ্রিয়ার বিশ্বাস, একজন অভিনয়শিল্পীর সবচেয়ে বড় কাজ হলো মানুষের কাছ থেকে শেখা। তাই তিনি নিজেকে কোনো আবরণে আবদ্ধ রাখেন না। প্রতিনিয়ত অন্যের জীবন থেকে শেখার চেষ্টা করেন। তাঁর মতে, ‘এখন অনেক তারকাই নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আটকে ফেলছেন। বাস্তব দুনিয়া থেকে দূরে, এক ভুয়া রঙিন দুনিয়ায় বাস করছেন তাঁরা।’
সার্বিকভাবে বলা যায়, অন্যের থেকে শিখে নিজেকে ক্রমাগত পরিপক্ব করে তোলাই এই তারকার লক্ষ্য। তিনি আরও অনেক কিছু করার স্বপ্ন দেখেন। ধীরে ধীরে প্রতিটি স্বপ্ন ছুঁতে চান শ্রিয়া।