মা ইলিশ রক্ষা অভিযান: মাঠে বাড়ছে সংঘর্ষ, প্রশ্ন কার্যকারিতা নিয়ে

MA-elish-bhola.jpg
আনোয়ার হোসেন

বাংলাদেশে চলছে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান। নদ-নদীতে ইলিশ শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও মাঠপর্যায়ে চিত্র ভিন্ন। বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলের নদীতে এখনো অবৈধভাবে ইলিশ ধরা অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসনের নৌকা চোখে পড়লেই জেলেরা পালিয়ে যায়, আবার কোথাও কোথাও সংঘবদ্ধ হয়ে হামলার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। ফলে এবারের অভিযান কতটা সফল হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

বরিশালের কীর্তনখোলা ও কালাবদর নদী ঘুরে দেখা গেছে অসংখ্য মাছ ধরার নৌকা। প্রশাসনের অভিযান দল নদীতে পৌঁছালে জেলেরা পালিয়ে যায় বা ইট-পাথর ছুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মৎস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার জেলেদের আক্রমণাত্মক মনোভাব অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি।

ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ভূঁইয়া বলেন, “১১ দিনের অভিযানে অন্তত পাঁচ দিন জেলেদের ধাওয়ার মুখে পড়েছি। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ইট-পাথর, দা, ট্যাঁটা নিয়ে হামলা করে।”হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, ও ভোলা এলাকায় একাধিক হামলার ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ মৎস বিভাগের কর্মকর্তারা আহত হয়েছেন। বরিশালে এক ঘটনায় একটি স্পিডবোট ডুবে গেছে, খোয়া গেছে আনসারের একটি অস্ত্র।সরকারি সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর জেলে পলাশ হাওলাদার বলেন, “আমরা বাধ্য হয়েই মাছ ধরছি। ২৫ কেজি চাল দেয় বলে শুনি, কিন্তু পাইনি। কিস্তির টাকা দিতে হয়—না নামলে খাইবো কী?”
বরিশালের ভাসানচর এলাকায় নৌকায় থাকা বহু পরিবার সরকারি নিবন্ধন ও সহায়তার বাইরে। জেলে শাহাবুদ্দিন সর্দার বলেন, “১৭ বছর ধরে কোনো কার্ড পাই না। মাছ না ধরলে না খাইয়া থাকতে হবে।”জেলেদের দাবি, কারেন্ট জালের উৎপাদন বন্ধ না করলে অভিযান ফলপ্রসূ হবে না। তারা বলেন, “কারেন্ট জালেই ছোড মাছ ধরা পড়ে যায়। এই জাল বন্ধ না হলে ইলিশ বাড়বে না।”সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২২–২৩ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৭১ হাজার টন, যা পরের বছরে কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ২৯ হাজার টনে। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, জাটকা নিধন ও অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধ না হলে উৎপাদন হ্রাস অব্যাহত থাকবে।

ভোলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, “আমরা বারবার বলছি—কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ না হলে ইলিশ রক্ষা সম্ভব নয়। এ জাল এত সহজলভ্য যে বাজার থেকে কিনলেই পাওয়া যায়।বাংলাদেশে ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভিযান চললেও ভারতের সঙ্গে এই নিষেধাজ্ঞা সমন্বিত নয়। ফলে সীমান্তবর্তী জলসীমায় ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন, যা বাংলাদেশের জেলেদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। তবে কোস্টগার্ড জানিয়েছে, এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো ভারতীয় নৌকার অনুপ্রবেশ ঘটেনি।
চলতি অভিযানের প্রথম ১০ দিনে ৪,২৫৪টি অভিযান ও ৯৭৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। ৫৩ দশমিক ৫ টন ইলিশ জব্দ করা হয়েছে এবং ৮৬৪ জন জেলেকে কারাদণ্ড ও ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মা ইলিশ রক্ষার পাশাপাশি জাটকা নিধন বন্ধ, অবৈধ জাল উৎপাদন রোধ ও জেলেদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত এই অভিযান টেকসই ফল দেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top